পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

প্যারিসের পথে পদব্রজে বেরিয়ে পড়লুম। প্রকাণ্ড রাজপথ দোকান বাগান প্রাসাদ প্রস্তরমূর্তি ফোয়ারা লােকজন গাড়িঘােড়ার মধ্যে অনেক ঘুরে ঘুরে এক ভােজনগৃহের বিরাট স্ফটিকশালার প্রান্তটেবিলে বসে অল্প আহার করে এবং বিস্তর মূল্য দিয়ে ঈফেল স্তম্ভ দেখতে গেলেম। এই লৌহস্তম্ভ চারি পায়ের উপরে ভর দিয়ে এক কাননের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। কলের দোলায় চ’ড়ে এই স্তম্ভের চতুর্থ তলায় উঠে নিয়ে সমস্ত প্যারিসটাকে খুব একটা বড়ো ম্যাপের মতাে প্রসারিত দেখতে পেলুম।

 বলা বাহুল্য, এমন করে এক দিনে তাড়াতাড়ি চক্ষুদ্বারা বহির্ভাগ লেহন করে প্যারিসের রসাস্বাদন করা যায় না। এ যেন, ধনীগৃহের মেয়েদের মতাে বদ্ধ পাল্কির মধ্যে থেকে গঙ্গাস্নান করার মতাে— কেবল নিতান্ত তীরের কাছে একটা অংশে এক ডুবে যতখানি পাওয়া যায়। কেবল হাঁপানিই সার।

 হােটলে এসে দেখলুম পুলিসের সাহায্যে বন্ধুর পাের্ট্‌ম্যাণ্টো ফিরে এসেছে, কিন্তু এখনাে সেই পরের হৃত কোর্তা সম্বন্ধে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আছি।

 ১০ সেপ্টেম্বর। লণ্ডন-অভিমুখে চললুম। সন্ধ্যার সময় লন্‌ডনে পৌঁছে দুই-একটি হােটেল অন্বেষণ করে দেখা গেল স্থানাভাব। অবশেষে একটি পরিবারের মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করা গেল।

 ১১ সেপ্টেম্বর। সকালবেলায় আমাদের পুরাতন বন্ধুদের সন্ধানে বাহির হওয়া গেল।

 প্রথমে, লন্‌ডনের মধ্যে আমার সর্বাপেক্ষা পরিচিত বাড়ি দ্বারে গিয়ে আঘাত করা গেল। যে দাসী এসে দরজা খুলে দিলে তাকে চিনি নে। তাকে জিজ্ঞাসা করলুম আমার বন্ধু বাড়িতে আছেন কি না। সে বললে তিনি এ বাড়িতে থাকেন না। জিজ্ঞাসা

৯৭