পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

―তারা পূর্বপ্রসঙ্গ ছেড়ে অন্য কথায় গিয়ে পড়েছে। মনের খেদে কেবল নিজেকেই ধিক্কার দিতে লাগলুম।

 ১৫ অক্টোবর। জাহাজে আমার একটি বন্ধু জুটেছে। লােকটাকে লাগছে ভালাে। অল্প বয়স, মন খুলে কথা কয়, কারও সঙ্গে বড়াে মেশে না, আমার সঙ্গে খুব চট ক’রে ব’নে গেছে। আমার বিবেচনায় শেষটাই সব চেয়ে মহৎ গুণ।

 এ জাহাজে তিনটি অস্ট্রেলিয়ান কুমারী আছেন— তাঁদের সঙ্গেও আমার আলাপ হয়েছে। বেশ সহজ সরল রকমের লােক, কোনােপ্রকার অতিরিক্ত ঝাঁজ নেই। আমার নববন্ধু এঁদের প্রশংসাস্বরূপে বলে: They are not at all smart। বাস্তবিক, অনেক অল্পবয়সী ইংরাজ মেয়ে দেখা যায়, তারা বড়ােই smart—বড্ড চোখমুখের খেলা, বড্ড নাকে মুখে কথা, বড্ড খরতর হাসি, বড্ড চোখাচোখা জবাব— কারও কারও লাগে ভালাে, কিন্তু শান্তিপ্রিয় সামান্য লােকের পক্ষে নিতান্ত শ্রান্তিজনক।

 ১৬ অক্টোবর। আজ জাহাজে দুটি ছােটো ছােটো নাট্যাভিনয় হয়ে গেল। দলের মধ্যে একটি অভিনেত্রীকে যেমন সুন্দর দেখতে, তিনি তেমনি সুন্দর অভিনয় করেছিলেন।

 আজ অনেক রাত্রে নিরালায় একলা দাঁড়িয়ে জাহাজের কাঠ ধরে সমুদ্রের দিকে চেয়ে অন্যমনস্কভাবে গুন্‌গুন্ করে একটা দিশি রাগিণী ধরেছিলুম। তখন দেখতে পেলুম অনেক দিন ইংরাজি গান গেয়ে গেয়ে মনের ভিতরটা যেন শ্রান্ত এবং অতৃপ্ত হয়ে ছিল। হঠাৎ এই বাংলা সুরটা পিপাসার জলের মতাে বােধ হল। আমি দেখলুম সেই সুরটি সমুদ্রের উপর অন্ধকারের মধ্যে যেরকম প্রসারিত হল, এমন আর কোনাে সুর কোথাও পাওয়া যায় বলে আমার মনে হয় না। আমার কাছে ইংরাজি গানের সঙ্গে

১২০