পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

তত দোষ ছিল না― আমাদেরই দোষ। আমাদের দুই ভাইয়ের মুখে বােধ করি বিষয়বুদ্ধির চিহ্নমাত্র ছিল না। এরকম মুখঞ্জ দেখলে অতি বড়ো সৎ লােকেরও ঠকিয়ে নিতে হঠাৎ প্রলােভন হতে পারে। যা হক, মল্টাবাসীর অসাধু স্বভাবের প্রতি আমার বন্ধুর অতিমাত্র ক্রোধ দেখে এ ঘটনাটা উল্লেখ করা আমার কর্তব্য মনে করলুম।

 ১৮ অক্টোবর। আজ ডিনার-টেবিলে ‘স্মাগ্লিং’ সম্বন্ধে কেউ কেউ নিজ নিজ কীর্তি রটনা করছিলেন। গবর্মেণ্ট্‌কে মাশুল ফাঁকি দেবার জন্যে মিথ্যা প্রতারণা করাকে এরা যেন কিঞ্চিৎ গৌরবের বিষয় মনে করে। আর যাই হােক, তেমন নিন্দা বা লজ্জার বিষয় মনে করে না। অথচ মিথ্যা এবং প্রতারণাকে যে এরা দূষণীয় জ্ঞান করে না সে কথা বলাও অন্যায়। মানুষ এমনি জীব! একজন ব্যারিস্টার তার মক্কেলের কাছ থেকে পুরা ফি নিয়ে যদি কাজ না করে এবং সেজন্যে যদি সে হতভাগ্যের সর্বনাশ হয়ে যায় তা হলেও কিছু লজ্জা বােধ করে না, কিন্তু ঐ মক্কেল যদি তার দেয় ফি’র দুটি পয়সা কম দেয় তা হলে কৌঁসুলির মনে যে ঘৃণামিশ্রিত আক্রোশের উদয় হয় তাকে তাঁরা ইংরাজি করে বলেন ‘রাইটিয়াস ইন্‌ডিগ্‌নেশন’। সর্বনাশ!

 ১৯ অক্টোবর। আজ সকালে জাহাজ যখন ব্রিন্দিশি পৌঁছল তখন ঘাের বৃষ্টি আরম্ভ হল। এই বৃষ্টিতে এক দল গাইয়ে বাজিয়ে হার্‌প্‌ বেয়ালা ম্যান্‌ডােলিন নিয়ে ছাতা মাথায় জাহাজের সম্মুখে বন্দরের পথে দাঁড়িয়ে গান বাজনা জুড়ে দিলে।

 বৃষ্টি থেমে গেলে বন্ধুর সঙ্গে ব্রিন্দিশিতে বেরােনাে গেল। শহর ছাড়িয়ে একটা খােলা জায়গায় গিয়ে পৌঁছলুম। আকাশ মেঘাচ্ছ, পাহাড়ে রাস্তা শুকিয়ে গেছে, কেবল দুই ধারে নালায়

১২৩