পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

অসাধারণ আসক্তি। বুধবারে প্রশান্ত সমুদ্র, উজ্জ্বল সূর্যালােক, কবিত্ব চিন্তা ও তজ্জাতীয় কথােপকথন। বৃহস্পতিবারে চমৎকার দিন— চিঠি লেখা। রাত্রে চন্দ্রালােকে একটা দেড়টা পর্যন্ত আলােচনা। ঘন বৃষ্টি। তার পরদিন সমস্ত দিন বৃষ্টি। সল্লিকে চিঠি। অতি ধীর গতি। দুই-একটা পাহাড়-পর্বতের রেখা। চমৎকার সন্ধ্যা। চন্দ্রালােকে এডেন। হঠাৎ জাহাজ-বদল। দীর্ঘ জাহাজ, সহস্র আলােকচক্ষু। জিনিসপত্র গােলমাল। দুই দল দুই দিকে। মাসেলিয়া জাহাজ। নতুন লােকজন।

 পুরােনাে জাহাজের সহযাত্রী― মাতৃহীন কতকগুলি মেয়ের একটি রুগ্ন বাপ― বেচারা! একটি চিরহস্যময় বালক civilian। Gambling।― নতুন জাহাজের সর্বোচ্চ ছাত। অনেক রাত্রে ছাড়লে। শান্ত সমুদ্র, জ্যোৎস্না রাত, বেশ বাতাস। ডেকে নিদ্রা। নতুন লােক। একটি মেয়ের প্রতি বহু পুরুষের দৃষ্টি। অনেক ছােটো ছােটো ছেলেমেয়ে। আজ শনিবার [৩০ অগস্ট্]। ব্যান্‌ড্‌ বেশ লাগছে। সল্লি ও কুমুদের চিঠি― বেশ রৌদ্র― সবসুদ্ধ বেশ। লােকেন নীরব। দুর সমুদ্রতীরের আরবদেশের পাহাড়গুলাে রৌদ্রে ক্লান্ত ও ঝাপসা দেখাচ্ছে― যেন তন্দ্রার ছায়া পড়ে অস্পষ্ট হয়ে পড়েছে।


 আমি লােকটা স্বভাবতঃ একটু চুপচাপ এবং একটু কোণ ভালােবাসি। দুই-একজন যাদের ভালােবাসি তাদের কাছের গােড়ায় নিয়ে বেশ একটুখানি সন্ধ্যালােক এবং একটু মধুর চিন্তার মধ্যে থাকা আমার জীবনের একমাত্র সাধ। দুশ্চিন্তা, দুশ্চেষ্টা, প্রবল কর্মপ্রখর আমােদ ―আমার নয়। কিন্তু আমি কাউকে পাই নে। কারও চুপ করে বসে থাকবার সময় নেই, পৃথিবীতে আমি এবং

১৩৮