পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

সন্ধ্যা এবং আকাশ এবং সৌন্দর্য ছাড়া আরও ঢের জিনিস আছে, কত কর্তব্য কত উদ্দেশ্য আছে, পৃথিবী খুব বেগে চলছে। কাজেই আমাকে কেবল একলা বসে থাকতে হয়। তাও পেরে উঠি নে— কাজেই যারা উদ্দাম বেগে কর্তব্যের দিকে এবং আমােদর দিকে যাচ্ছে তাদের সঙ্গ রাখবার জন্যে আমার চিন্তা ফেলে, সন্ধ্যা ফেলে, তাড়াতাড়ি ছুটতে হয়। সুতরাং আমার ভাবটা না তাদের মতো, না আমার মতাে; না খাটতে পারি হাসতে পারি, না ভাবতে পারি উপভােগ করতে পারি― না আমি পৃথিবীর সেবক, না আমি পৃথিবীর নবাব।

 আমরা পুরাতন ভারতবর্ষীয়, ভারী প্রাচীন, ভারী শ্রান্ত। আমি অনেক সময়ে নিজের মধ্যে আমাদের জাতীয় প্রাচীনত্ব অনুভব করি— বিশ্রাম এবং চিন্তা এবং বৈরাগ্য। আমাদের যেন এখন ছুটির সময়। যা উপার্জন করা গেছে তারই উপরে নিশ্চিন্তে শেষ বেলাটা কাটাবার সময়। এমন সময় হঠাৎ দেখা গেল অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে―যে ব্রহ্মত্রটুকু পাওয়া গিয়েছিল তার ভালাে দলিল দেখাতে পারি নি বলে নতুন রাজার রাজত্বে ক্রোক হয়ে গেছে। হঠাৎ আমরা গরিব। পৃথিবীর চাষারা যে রকম খাটছে এবং খাজনা দিচ্ছে আমাদেরও তাই করতে হবে। পুরাতন জাতকে নতুন চেষ্টা আরম্ভ করতে হয়েছে। চিন্তা রাখো, বিশ্রাম রাখাে, গৃহকোণ ছাড়ো―কঠিন মাটির ঢেলা ভাঙো— পৃথিবীকে উর্বরা করাে এবং নব মানব -রাজার রাজত্ব দেও। উঠেছি তো, চলেওছি― দেখাচ্ছি খুব কাজের লােক হয়েছি― কিন্তু ভিতরে ভিতরে কতটা নিরাশ্বাস কতটা নিরুদ্যম। থেকে থেকে মনে হয় আমরা কাজের লােকের সঙ্গে কিছুতেই তাল রেখে চলতে পারব না, অথচ আমাদের বিশ্রাম এবং শান্তির অবসর রইল না। হায়, ভারতবর্ষের

১৩৯