পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

ভিত্তিছিদ্রে আপন যাতায়াতের তারিখ চিরহরিৎ অঙ্কে অঙ্কিত করে গেছে। এক দিক থেকে একে নগর বলা যেতে পারে, এক দিক থেকে একে অরণ্য বলা যায়। এর মধ্যে কেবল ছায়া এবং বিশ্রাম, চিন্তা এবং বিষাদ বাস করতে পারে— এখানকার ঝিল্লিমুখরিত অরণ্যমর্মরের মধ্যে, এখানকার বিচিত্রভঙ্গী জটিল শাখাপ্রশাখা ও রহস্যময় পুরাতন অট্টালিকাভিত্তির মধ্যে সহস্র সহস্র ছায়াকে কায়াময়ী ও কায়াকে ছায়াময়ী বলে ভ্রম হয়― এখানকার এই প্রাচীন মহাছায়ার মধ্যে সত্য এবং কল্পনা ভাইবােনের মতাে নির্বিবােধে আশ্রয় গ্রহণ করেছে, অর্থাৎ প্রকৃতির বিশ্বকার্য এবং মানবের মানসিক সৃষ্টি পরস্পর জড়িত বিজড়িত হয়ে নানা আকারের ছায়াকুঞ্জ নির্মাণ করেছে, সেখানে ছেলেমেয়েরা সারাদিন খেলা করে এবং বয়স্ক লােকেরা স্বপ্ন দেখে, প্রখর সূর্যালােক ছিদ্রপথে সেখানে প্রবেশ করে ছােটো ছােটো মানিকের মতাে দেখায়। প্রবল ঝড় শত শত সংকীর্ণ শাখাপথের জটিলতার মধ্যে প্রতিহত হয়ে সেখানে এসে মৃদু মর্মরের মধ্যে মিলিয়ে যায়। এখানে জীবনমৃত্যু সুখদুঃখ আশানৈরাশের সীমাচিহ্ন মিলিয়ে এসেছে― অদৃষ্টবাদ এবং কর্মকাণ্ড, বৈরাগ্য এবং সংসারযাত্রা এক সঙ্গে চলেছে। এখানে কি তােমাদের জগৎযুদ্ধের সৈন্যশিবির স্থাপন করবার জায়গা! এখানকার জীর্ণ ভিত্তি কি তােমাদের কলকারখানা, তােমাদের শৃঙ্খলিত অগ্নিগর্ভ দুরন্ত লৌহদৈত্যদের কারাগার নির্মাণের যােগ্য! তােমাদের প্রবল উদ্যমের বেগে এর শিথিল ইষ্টকগুলিকে ভূমিসাৎ করতে পারো বটে, কিন্তু তার পরে পৃথিবীর এই অতি প্রাচীন শ্রান্ত জাতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে! এরা বহুদিন স্বহস্তে গৃহনির্মাণ করে নি― সেই এদের মহৎ গর্ব যে প্রাচীন আদিপুরুষের বাস্তুভিত্তি এদের কখনাে ছাড়তে হয় নি; কালক্রমে অনেক অবস্থাবৈসাদৃশ্য অনেক বংশবৃদ্ধি

১৪৩