পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

এইরকম করে সূর্যাস্তের সময় হল। Band বাজছে। Castle of Indolence যদি কোথাও থাকে তাে সে হচ্ছে জাহাজ― বিশেষতঃ গরম দিনে প্রশান্ত Red Seaর উপরে― ইংরেজ-তনয়রাও সমস্ত দিন ডেকের উপর আরাম-কেদারায় পড়ে দিবাস্বপ্ন দেখছে― কেবল জাহাজ চলছে, এবং তার দুই পাশের আহত নীল জল নাড়া খেয়ে অলস আপত্তির ক্ষীণস্বরে পাশ কাটিয়ে একটুখানি সরে যাচ্ছে― আর বিকেলের দিকে বাতাসও একটু একটু বইতে আরম্ভ করেছে— জগতের আর-সমস্ত স্বপ্ন দেখছে— দুই-একটা শাদা লঘু মেঘখণ্ড তারাও নড়ছে না।—

 সূর্য অস্ত গেছে। আকাশের এবং জলের চমৎকার রঙ হয়েছে। সমুদ্রের জলে একটি রেখা মাত্র নেই। দিগন্তবিস্তৃত অটুট জলরাশি নিটোল সুডোল কোমল পরিপূর্ণ যৌবনের মতাে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। এমন একটা জায়গায় এসেছে যার ঊর্ধ্বে আর গতি নেই, পরিবর্তন নেই, যা অবিশ্রাম চাঞ্চল্যের পরম পরিণতি, চরম নির্বাণ। সন্ধের সময় চিল আকাশের যে-একটা সর্বোচ্চ নীলিমার সীমার কাছে গিয়ে সমস্ত পাখা সমতল রেখায় বিস্তার করে দিয়ে হঠাৎ গতি বন্ধ করে দেয়― চিরচঞ্চল সমুদ্র ঠিক যেন সহসা সেই রকম একটা চরম প্রশান্তির শেষ সীমায় এসে ক্ষণেকের জন্যে পশ্চিম অস্তাচলের দিকে মুখ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলের যে চমৎকার রঙ হয়েছে তাকে আকাশের ছায়া বললে যেন ঠিক বলা হয় না—যেন এই মাহেন্দ্রক্ষণে সন্ধ্যাকাশের স্পর্শ লাভ করে হঠাৎ সমুদ্রের অতলস্পর্শ অন্ধকার গভীরতার মধ্যে থেকে একটা আকস্মিক প্রতিভার দীপ্তি স্ফূর্তি পেয়েছে― সে কতটা তার কতটা আকাশের বলা যায় না। আমাদের কত কবিতা কত গান আর-এক জনের দুখানি নেত্রের

১৫০