পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

না। কিন্তু এ কথা নিশ্চয় সত্যি যে, ঐ আকাশ আমারই অসীম দৃষ্টির মতাে এবং এই সমুদ্র আমারই ভালােবাসামুগ্ধ হৃদয়ের মতাে এই মুহূর্তে এই সমুদ্রে আমার আপনাকে ব্যক্ত করবার জন্যে একটি কথা বলবার আবশ্যক থাকত না। যদি এর অনুরূপ একটি কথা থাকত তা হলে সেইটি লিখে নিয়ে যেতুম, যে শুনত সে সমস্ত বুঝতে পারত। থাক্‌গে—কবিত্ব থাক্। রাত্তিরে ডিনার-টেবিলে Inspector-General of Policeএর সঙ্গে লােকেনের তর্ক, আরও দুই-একজন যােগ দিয়েছিল।

 রবিবার [৩১ অগস্ট্‌]। সকালে Evansএর সঙ্গে জ্ঞানেমােহনের বিষয় এবং ব্রাহ্মবিবাহ সম্বন্ধে অনেক আলােচনা হল, তাতে সে কতকটা আশ্বাস দিলে― কিন্তু ভালাে করে ভেবে দেখলে অনেক ব্যাঘাত দেখা যায়। আজ সকালে এখানে উপাসনা হল। একটা মেয়ে ভারী বিরক্ত করেছিল― একে তাে সে যােগ দেয় নি, তার পরে হো হো করে হাসছিল— এমন খারাপ লাগছিল! যখন উপাসকরা সবাই মিলে গান গাচ্ছিল আমার বেশ লাগছিল। এর মধ্যে সমস্ত মানবের কণ্ঠধ্বনি শােনা যায়, চির-অজ্ঞাত চিররহস্যের দিকে ক্ষুদ্র মানবহৃদয়ের কী-একটা বিশ্বাসের গান উঠছে! আশ্চর্য! ঐ মেয়েটা মাঝে মাঝে যখন সেই গানে যােগ দিচ্ছিল তখন আমার নিতান্ত blasphemous বলে ঠেকছিল, তার অট্টহাস্যও তত খারাপ ঠেকে নি। বিশ্বাস না থাকলে কি হৃদয়ও থাকতে নেই? আজ breakfastএর সময় একটা খবরের সৃষ্টি করা গেল। রুটি কাটতে গিয়ে ছুরিটা ছিটকে সবলে আমার দুটো আঙুলের উপর পড়ল, রক্ত ছিটকে উঠে চার দিকে ছড়িয়ে পড়ল― খানিকটা বরফ দিয়ে ন্যাপ্‌কিনে আঙুল জড়িয়ে ক্যাবিনে ছুট। গা বমি করতে লাগল। অনেক

১৫২