পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

যেখানেতে শেষ দেখা  রাখিয়া গিয়াছে রেখা
জ্যোতিময় এক অমর অশ্রু তারা-আলােকেতে লেখা―
বাকি আর-সব স্তব্ধ নীরব তিমিরনিরাশ নিশি,
অজানা অপার অকূল আঁধার প্রসারিয়া দশদিশি।
cancelled ..

 সোমবার [১ সেপ্‌টেম্বর]। সকালবেলাটা শরীর ভালাে ছিল না, চুপচাপ কাটিয়ে দিয়েছি। দুই-একজন লোক আপনি আলাপ করে গেল। এরা কাল থেকে জানতে পেরেছে আমরা Tagores, তাই কাল থেকে কাছাকাছি ঘুর্‌ঘুর্‌ করছে। [কাল] একটা কবিতা লেখার চেষ্টা করা গেছে, সেটাতে মনের ভাব ভালাে ব্যক্ত হয় নি। বদলাতে হবে। টিফিনের পর সেলুনে বসে বাবিকে চিঠি লিখতে বসেছি— তরঙ্গ উঠে আমাকে এবং আমার চিঠিগুলােকে ভিজিয়ে দিলে, তাতে দুই-একজন এসে আহা-উহু করে গেল। সন্ধের পর আহারান্তে চুপচাপ করে ডেকের উপর জমিয়েছি, লােকেন একটা চৌকির উপরে অগাধ নিদ্রামগ্ন, মেজদাদা চুরট টানছেন― এমন সময়ে নিচেকার ডেকে নাচের বাজনা বেজে উঠল— সকলে মিলে নাচের ধুম পড়ে গেল। মহা-ঘুর্‌পাক মহা-উত্তেজনা চলছে― তখন পূর্বদিকে নবকৃষ্ণপক্ষের ঈষৎ ভাঙা চাঁদ ধীরে ধীরে উঠতে আরম্ভ করেছে— এই তীররেখাশূন্য জলময় মহামরুর পূর্বসীমান্তে চাঁদের পাণ্ডুর আলোেক পড়ে সে দিকটা ভারী একটা অসীম ঔদাস্য এবং নৈরাশ্যের ভাবে পূর্ণ দেখাচ্ছিল। চাঁদের উদয়পথের নীচে থেকে আমাদের জাহাজ পর্যন্ত একটা প্রশস্ত দীর্ঘ আলােকপথ ঝিক্‌ঝিক্‌ করছে— এই বিজন সমুদ্রের মাঝখানে প্রকৃতি চুপিচুপি আপন প্রশান্ত সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে। সমই ধীরে নীরবে সুন্দর

১৫৪