পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

হয়ে উঠছে, রাত্রির সুমধুর শান্তি একটি রজনীগন্ধা-কুঁড়ির শুভ্র পাপড়ির মতাে অলক্ষিত নিঃশব্দে ক্রমশঃ প্রসারিত হয়ে যাচ্ছে― আর মানুষগুলাে পরস্পরকে জড়াজড়ি করে ধরে পাগলের মতাে ঘুরপাক খাচ্ছে― ভারী আমােদ করছে— সর্বাঙ্গের রক্ত গরম হয়ে মাথায় ফেনিয়ে উঠছে, বিশ্বসংসার সমস্ত ঘুরছে, হাঁপাচ্ছে, তপ্ত হয়ে উঠছে― আশ্চর্য কাণ্ড! লােকলােকান্তরের নক্ষত্র স্থিরভাবে চেয়ে রয়েছে এবং দূরদুরান্তরের তরঙ্গ ম্লান চন্দ্রালােকে অনন্তকালের চিরপুরাতন গাথা সমস্বরে গান করছে― এই রজনীতে এই আকাশের নীচে এবং এই সমুদ্রের উপরে কতকগুলি পরিচিত-অপরিচিত লােক জুড়ি-জুড়ি জড়াজড়ি করে লাঠিমের মত বোঁ বোঁ করে ঘুর খাওয়াকে খুব সুখ মনে করছে—একটু লজ্জা নেই, সংযম নেই, চিন্তা নেই, পরস্পরের মধ্যে একটা শােভন অন্তরাল নেই। আমি এটা কিছুতেই ভালাে বুঝতে পারি নে। যাক্‌গে, মরুক্‌গে, যাদের ঘুরুনি পায় ঘুরুক্‌গে— আমার যা আছে তাই আমার থাক্। আমার এই চন্দ্রালােককে নিয়ে কোনাে ইংরেজের ছেলে polka নাচতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবিক ভয় হয়, পাছে সর্বজয়ী ইংরেজ-তনয় আমার জীবনের কোনাে-একটি অচল শান্তিসুখকে টেনে নিয়ে এমনি করে polka নাচায়।

 মঙ্গলবার [২ সেপ্‌টেম্বর]। সকালে ডেকে বেড়াবার সময় Evansএর সঙ্গে আমার বেশ দীর্ঘ আলাপ হয়, বেশ লাগে। আজ সকালে দেখলুম সে একটা নিতান্ত বেচারা ইংরেজ-বাচ্ছার কাছে modern thoughts and modern scienceএর কথা পেড়েছে, সে ব্যক্তি নিতান্ত বিক্ষিপ্ত উদ্‌ভ্রান্ত উদ্‌বিগ্ন হয়ে খানিকটা ইতস্তত করে দে-ছুট দিলে। Evans হতাশ্বাস হয়ে চৌকিতে বসে পড়ল। আমি তার কাছে একটা কথা পাড়লুম। আমি বললুম আমি Ibsen-

১৫৫