পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

ছেলে খেলা করছে। নিচেকার তীরপথ দিয়ে গাধার উপর চড়ে লােক চলেছে। এক-একটা গাধার উপর দুটো লােক। আমাদের বাঁ দিকে পাহাড়। সূর্য অস্ত গেছে। এখনাে সমুদ্রতীরে কতকগুলাে গােরু চরছে; কী খাচ্ছে তারাই জানে, মাঝে মাঝে শুক্‌নাে খড়কের মতাে দেখা যাচ্ছে মাত্র― একটা বাছুর রেলগাড়ির সঙ্গে পাল্লা দেবার জন্যে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটেছে। এখানকার সমুদ্র তেমন নীল দেখাচ্ছে না, মেটে রকমের। ঢেউগুলো ফেনিয়ে ফেনিয়ে পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে।

 রাত্রে টঙের উপর চড়ে তো বেশ নিদ্রা দেওয়া গেল। আজ সােমর [৮ সেপ্‌টেম্বর]। সকালে উঠে দেখা গেল চার দিকে সুন্দর শ্যামল— পরিপাটি রকম চাষ-করা ভুট্টার ক্ষেত— প্রত্যেকের ক্ষেত বড় অলিভ গাছ দিয়ে ঘেরা, তাই পাশাপাশি দুই ক্ষেতের মাঝখানের ব্যবধানটুকু বেশ সুন্দর ছায়াপথের মতাে দেখাচ্ছে। কোথাও তিলমাত্র জঙ্গল নেই। কাল যে রকম আঙুরের ক্ষেত দেখেছিলুম আজ সে রকম দেখছি নে। সে আঙুরগুলাে ছােটো ছােটো গুল্মের মতো― আজ দেখছি লম্বা লম্বা এক-একটা কাঠি পোঁতা, তার উপরে আঙুর লতিয়ে উঠেছে। উঁচুনিচু জায়গা, ছােটো ছােটো ভুট্টার ক্ষেত, তার চার দিকে আঙুরের বেড়া― এবং এক-এক জায়গা কেবলই আঙুর। মাঝে মাঝে দুটো-একটা বাড়ি, এক-আধটা চার্চ্, বেশ দেখাচ্ছে। পাহাড়ের উপর থেকে নীচে পর্যন্ত ভ্রাক্ষাদণ্ডে কণ্টকিত হয়ে উঠেছে, তারই মাঝখানে একটি শহর। তুঁতের ক্ষেত। ছােটো ছােটো চতুষ্কোণ তৃণক্ষেত্র এবং তাকে বেষ্টন করে বেঁটে বেঁটে পল্লবিত তুঁত গাছের শ্রেণী। কোথাও ভুট্টাক্ষেতে তুঁতের বেড়া। কোথাও তুঁত এবং দ্রাক্ষা এক সার বেঁধে চলেছে। আমরা অ্যাড্রিয়াটিক তীরপ্রদেশ ছাড়িয়ে এখন

১৬২