পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

লম্বার্ডির মধ্য দিয়ে চলেছি। এখানে রেশম ভুট্টা এবং আঙুরের চাষ। রেলের লাইনের ধারে দ্রাক্ষাক্ষেত্রের পাশে একটি কুটীর; এক হাতে তারই একটি দুয়ার ধরে এক হাত কোমরে দিয়ে একটি ইটালিয়ান যুবতী সকৌতুক কৃষ্ণনেত্রে আমাদের গাড়ির গতি নিরীক্ষণ করছে। একটি ছােটো বালিকা একটা প্রখরশৃঙ্গ প্রশস্তস্কন্ধ প্রকাণ্ড গােরুর গলার দড়িটি ধরে চরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে— কী বল, এবং তার কী বন্ধন! তার থেকে আমাদের বাংলাদেশের নবদম্পতি মনে পড়ল। মস্ত একটা গ্রাজুয়েট্‌পুঙ্গব এবং ছােট্ট একটি বারাে-তেরাে বৎসরের নববধূ— দিব্যি পােষ মেনে চরে বেড়াচ্ছে এবং মাঝে মাঝে ড্যাবাড্যাবা নেত্রে তার প্রতি সস্নেহ দৃষ্টিপাত করছে। ট্যুরিন স্টেশনে আসা গেছে। এদেশে পুলিসম্যানের আচ্ছা সাজ যা হােক! মস্ত-চূড়া-ওয়ালা টুপি, অনেক জরিজরাও, মস্ত তলােয়ার―খুব একটা সেনাপতির মতাে। আমাদের দেশে এ রকম পাহারাওয়ালা থাকলে তাদের চেহারা দেখে আমরা ডরিয়ে ডরিয়ে আরও কাহিল হয়ে যেতুম। চোরে যত চুরি করে এদের কাপড়চোপড়ে তার চেয়ে ঢের বেশি যায়।― আমাদের বাঁয়ের পাহাড়ের সর্বোচ্চ শিখরে একটু-একটু বরফের শ্বেত চিহ্ন পড়েছে। বেশ ঠাণ্ডা বােধ হচ্ছে, কিন্তু কিছুমাত্র শীত করছে না। (কাল রাত্তিরে আমরা যখন ডিনার খাচ্ছিলুম, এক দল লােক প্ল্যাট্‌ফর্মে দাঁড়িয়ে বিশেষ কৌতুহলের সঙ্গে আমাদের দেখছিল। তার মধ্যে দুটি-একটি বেড়ে সুন্দর মেয়ের মুখ দেখা যাচ্ছিল— তাতে করে ভােজনপাত্র থেকে আমাদের চিত্ত অনেকটা বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছিল। ট্রেন ছাড়বার সময় আমাদের সহযাত্রী পুরুষগণ তাদের প্রতি অনেক টুপি ও রুমাল আন্দোলন, অনেক চুম্বনসঙ্কেত -প্রেরণ, অনেক তারস্বরে উল্লাসধ্বনি -প্রয়ােগ করলে; তারাও গ্রীব-আন্দোলনে আমাদের অভিবাদন করতে

১৬৩