পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

চলেছে। প্রকৃতি এবং মানুষে মিলে কেবল সাজাচ্ছে এবং উৎপন্ন করছে।― সেই হ্রদ চলেছে। দশ মাইল আয়ত। কিন্তু আর কী লিখব! কত অরণ্য, কত পর্বত, কত নদী, কত শহর।

 আমাদের প্যারিসে নাববার কথা হচ্ছে। কিন্তু প্যারিসে আমাদের ট্রেন যায় না, একটু পাশ দিয়ে চলে যায়। যে স্টেশন দিয়ে প্যারিসে যায় সেইখানে একটা স্পেশ্যাল ট্রেন রাখবার জন্যে টেলিগ্রাফ করা হয়েছে। একবার শােনা যাচ্ছে রাত এগারােটার সময় ট্রেন বদলাতে হবে, একবার শুনছি একটা, একবার দুটো, একবার সাড়ে-তিন, একবার সাড়ে-চারটে। কাপড়-চোপড় পরেই শুয়ে রইলুম। রাত দুটোর সময় জাগিয়ে দিলে। জিনিস-পত্র বেঁধে উঠে পড়লুম। বিষম ঠাণ্ডা। দুরে একটা প্ল্যাট্‌ফর্মে একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে― কেবল একটি এঞ্জিন, একটি ফাস্ট্‌ক্লাস, এবং একটি ব্রেক্‌-ভ্যান— আমরা তিনটি ভারতবর্ষীয় চললুম। রাত তিনটের সময় শূন্য প্ল্যাট্‌ফর্মে পৌঁছনো গেল―সুপ্তোত্থিত দুটো-একটা মশিয়াে আলাে নিয়ে উপস্থিত। অনেক হাঙ্গাম করে কাস্টম হৌস এড়িয়ে গাড়িতে উঠলুম। তখন প্যারিস দ্বার রুদ্ধ করে সহস্র দীপশ্রেণী জালিয়ে দিয়ে নিদ্রিত। আমরা Hotel Terminusএ হাজির হলুম। liftএ ক’রে চতুর্থ তলায় শয়নকক্ষে প্রবেশ করা গেল। পরিপাটি পরিচ্ছন্ন বিদ্যুদ্দীপ্ত কার্পেটাবৃত দর্পণশােভিত নীলবর্ণযবনিকা-খচিত চিত্রিতভিত্তি নিভৃত কক্ষ, বিহঙ্গপক্ষসুকোমল শয্যা। জিনিস-পত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখি, একটি পরের overcoat নিয়ে এসেছি। চিন্তা করে দেখা গেল সম্ভবতঃ যার কম্বল আমি রাত্তিরে নিয়েছিলুম তারই overcoat— সে বেচারা বৃদ্ধ, শীতপীড়িত, বাতে পঙ্গু অ্যাংলােইন্‌ডীয় পুলিশ-অধ্যক্ষ; পুলিশের কাজ করে যদি তার পৃথিবীর উপরে অবিশ্বাস জন্মে থাকে তা হলে

১৬৭