পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

চিরজীবনের লক্ষণ। তাতেই আমাদের ব’লে দিচ্ছে এখনাে আমাদের বৃদ্ধি ও বিকাশের শেষ হয় নি। শৈশবই যদি মানুষের শেষ হত তা হলে মানুষের মতাে অপরিস্ফুটতা প্রাণীসংসারে কোথাও পাওয়া যেত না, আমাদের এই অপরিণত পদস্খলিত ইহজীবনই যদি আমাদের শেষ হত তা হলেই আমরা একান্ত দুর্বল সন্দেহ নেই। কিন্তু শৈশবের দুর্বলতাই যেমন প্রকাশ করছে তার উন্নততর ভবিষৎ আছে, তেমনি মানুষের এই দুর্বল ইহজীবনই তার ভবিষ্যৎ উন্নততর জীবনের সূচনা।

 পৃথিবীর কত দুর্বল, কত পতিত, কত অপরাধী, পৃথিবীর কত বলিষ্ঠহৃদয় সাধুর চেয়ে প্রকৃতপক্ষে মহৎ এবং কুলীনবংশােদ্‌ভব তা চিরজীবনের হিসাবে ক্রমশঃ ব্যক্ত হবে।


 natural selectionএর নিয়ম মানুষ পর্যন্ত এগিয়ে এক রকম বন্ধ হয়ে গেছে— তার শেষ ফল কী ভালাে করে বুঝে ওঠা যায় না। দেখা যাচ্ছে সৌন্দর্যপ্রেম অনেক স্থলে আমাদের প্রাকৃতিক জীবনের হানিজনক। শিল্পচর্চার ইতিহাস অধ্যয়ন করলে দেখা যায়—অনেক বড়ো বড়ো শিল্পী বিস্তর দারিদ্র্যকষ্ট এবং জীবনের ক্ষতি স্বীকার করে শিল্পচর্চা করেছে এবং এই রকম ক’রেই অল্পে অল্পে শিল্পবিদ্যার উন্নতি হয়েছে, natural selectionএর নিয়মে এর কোনাে কারণ পাওয়া যায় না। জীবনের ক্ষতির মধ্যে দিয়েই উন্নতি— এ কেবল মানুষের মানসিক ও আধ্যাত্মিক জগতে দেখা যায়। বিজ্ঞান সম্প্রতি মানুষের কাজে লেগেছে, কিন্তু তার আরম্ভকালে কেবলমাত্র নিস্বার্থ জ্ঞানস্পৃহা থেকে যখন বিবিধ শারীরিক দুর্গতি এবং প্রাণপণ স্বীকার ক’রে বহুকাল ধ’রে মানুষ বিজ্ঞানের চর্চা করে এসেছে তার কারণ কী? দুয়ের মধ্যেই দেখা

১৯৫