পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

 উপরে গিয়ে বেড়াচ্ছিলুম, একজন অস্‌ট্রেলিয়ান মেয়ে আমার সঙ্গ নিলে। আমি দেখেছি এ রকম মেশামেশি বেশিক্ষণ আমি সইতে পারি নে। আজ সন্ধের সময় সুন্দরীর সঙ্গে দুদণ্ড কথাবার্তা কয়ে এমনি শ্রান্তি এবং বিরক্তি বােধ হতে লাগল, যে, কোনাে ছুতােয় পালাতে পারলে বাঁচি এমনি মনে হল। সৌন্দর্য দেখতে এবং কল্পনা করতে বেশ লাগে, কিন্তু সৌন্দর্যের সঙ্গে পায়চারি করে small talk করতে আদবে ভালাে লাগে না। আমি মনে মনে মেয়েদের এত ভালােবাসি, কিন্তু তাদের সঙ্গে ভাব করতে পারি নে— আশ্চয্যি! আমার আপনা-আপনি ছাড়া আর কারও সঙ্গে কখনাে বন্ধুত্ব হবে না। আজ এদের অভিনয় হয়ে গেল। আমার সেই সুন্দরী বন্ধু চমৎকার অভিনয় করেছিল, তাকে ভারী সুন্দর দেখাচ্ছিল। সে আমার সঙ্গে এমন এক রকম করুণ মমতার সঙ্গে কথা কয়, এমন এক রকম পূর্ণ ঊর্ধ্ব দৃষ্টিতে মুখের দিকে চায়, আমার বেশ লাগে— যদিও তার সঙ্গে যে বেশি মিশি তা নয়। আজ রাত্তিরেও আমাকে গান গাইতে হল। তার পরে নিরালায় অন্ধকারে জাহাজের কাঠরা ধরে সমুদ্রের দিকে চেয়ে যখন গুন্ গুন্ করে একটা দিশি রাগিণী ভঁজছিলুম ভারী মিষ্টি লাগল। ইংরিজি গান গেয়ে গেয়ে শ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলুম, হঠাৎ দিশি গানে প্রাণ আকুল হয়ে গেল। যত দিন যাচ্ছে ততই আবিষ্কার করছি আমি বাস্তবিক আন্তরিক দিশি, বাঙালী, ঘােরো, কুনো, সেকেলে, শ্রান্ত, অকর্মণ্য— এখনকার লােক অতি শীঘ্র আমাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে চলে যাবে― আমি আমার জনশূন্য কোণে চিরকাল মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকব। অনেক রাত হয়ে গেছে।

 যে দুটো নাটক অভিনয় হয়ে গেল তার মধ্যে একটা নাম হচ্ছে Our Bitterest Foe— দ্বিতীয়টা Fast Friends। প্রথমটা

২০৬