পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

হুহু করে ভেসে কোথায় মিলিয়ে যেতে হয় অনন্ত ইহজগতে তার আর কোনাে চিহ্ন পাওয়া যায় না। এই রকম করে মহারাক্ষস মৃত্যু জীবন গ্রাস করে করে চিরদিন বেঁচে রয়েছে। মিছে কেন তর্কবিতর্ক মতামত সন্দেহবিচার! এই ক্ষণিক সূর্যালােকে আমাদের দুদণ্ডের হাসিগল্প মেলামেশা, পরস্পরের প্রতি বিস্ময়পূর্ণ দৃষ্টি এবং প্রেমপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা― চন্দ্রোদয়, ফুল-ফোটা বসন্তের বাতাস, দুদিনের মােহ সমাপন করে নেওয়া যাক্― যবনিকার অন্তরালে মৃত্যু প্রতীক্ষা করে বসে আছে। কোন্ অসম্ভব সুখ কোন্ দুর্লভ ভালােবাসার জন্যে চিরদিন নির্বোধের মতাে অপেক্ষা করে বসে আছি— আমাদের কি অপেক্ষা করবার সময় আছে! যা হাতের কাছে আসে তাই নিয়ে প্রসন্নচিত্তে কাটিয়ে দেওয়া যাক— তাড়াতাড়ি করে জীবনকে যথাসাধ্য সম্পূর্ণ করে তুলতে হবে। তুমি দৈবক্রমে আমার কাছে এসে পড়েছ, এসাে― তুমি আমার ভালােবাসা চাও না, যাও, আপন পথে যাও— জিজ্ঞাসা করবার সময় নেই— বিলাপ করবার অবসর নেই— সুখ দুঃখ হিসাব করবার আবশ্যক নেই। যা পার না প্রসঙ্কুচিত্তে তার মঙ্গল কামনা করে তার কাছ থেকে বিদায় নেওয়া যাক।

 জাহাজের রেলিং ধরে সমুদ্রের দিকে চেয়ে এই রকম করে আপনার জীবন সমালােচনা করছিলুম, এমন সময় একজন এসে জিজ্ঞাসা করলে, তুমি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কেউ হও কি? আমি বললুম বিশেষ কেউ নয়, তাঁর ভাইমাত্র। এও সিভিলিয়ান। ৮৬ সালে তাঁর হয়ে সােলাপুরে এক্‌টিন ছিল, বাবিকে জানে। Brandকে জানে― বেশ পিয়ানাে বাজাতে পারে, ভারী কুনো। Mrs Moeller আমাকে গান গাইতে অনুরােধ করলে, সে আমার সঙ্গে পিয়ানাে বাজালে। Mrs Moeller বললে: It is a

২২০