পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

অনুভব করবার জন্যে তার গােপন ব্যাকুলতা থাকে। এই জন্যে য়ুরােপে যেমন স্বপ্নের আদর এমন আর কোথাও নেই। সেই নিয়মের বশে আকৃষ্ট হয়ে দুই-একটি সঙ্গী আশ্রয় করে ঘর থেকে বেরিয়েছিলুম, কিন্তু এই কাজের কোলাহল এবং আমােদর মত্ততার মধ্যে কি আমি তিষ্ঠতে পারি? সমুদ্রের তরঙ্গ দেখতে বেশ এবং তার কলধ্বনি শুনতে ভালাে লাগে, কিন্তু যে সাঁতার জানে না তীরে বসে উপভােগ করাই তার পক্ষে সুবুদ্ধির কাজ। দেখলুম বন্ধুবান্ধব অনেকেই ঝাঁপ দিচ্ছে এবং মহা আনন্দে চীৎকার করছে, তাই দেখে আমিও তাড়াতাড়ি ঝাঁপ দিয়েছিলুম― খানিকটা নাকানি-চোবানি এবং লােনা জল খেয়ে উঠে এসেছি। এখন কিছুদিন ডাঙার উপরে সর্বাঙ্গ বিস্তার-পূর্বক চক্ষু মুদ্রিত করে রােদ পােহাব মনে করছি।—

ভাসল তরী সকালবেলা,  ভাবিলাম এ জলখেলা—
মধুর বহিবে বায়ু, ভেসে যাব রঙ্গে।

কিন্তু seasicknessএর কথা কে মনে করেছিল! আমার এই সভ্যতার তরঙ্গের মধ্যে সেই seasicknessএর উদয় হয়েছিল। আমার এই চিরবিশ্রামশীল অন্তরাত্মা যে একটুতেই এত নাড়া খাবে এবং প্রতি নিমেষে কণ্ঠাগত হয়ে উঠবে তা কে জানত!


 আজ সকালবেলা স্নানের ঘর বন্ধ দেখে দরজার সামনে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছি। কিয়ৎক্ষণ বাদে বিরলকেশ স্থূলকলেবর দ্বিতীয় ব্যক্তি তােয়ালে এবং স্পঞ্জ্ হাতে উপস্থিত, স্নানের ঘর খালাস হবামাত্রই দেখি সে অম্লানবদনে ঢােকবার অভিপ্রায় করছে―কিছুমাত্র লজ্জা কিম্বা দ্বিধা নেই। প্রথমেই মনে হল কোনাে রকম করে তাকে ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ি, কিন্তু কোনাে রকম শারীরিক

২২৬