পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

কী ভয়ানক কষ্টের জীবন! এদের পুরুষরা কী স্বার্থপর! স্ত্রীলােকদের জন্তুর মতাে করে রেখেছে! জানে না আমাদের দশাই এই। আমরা মিল পড়ি, রস্কিন পড়ি, স্পেন্সর পড়ি, কেরানিগিরি করি, খবরের কাগজে লিখি, বই ছাপাই, ওই মাটির প্রদীপ জ্বালি, ঐ মাদুরে বসি, অবস্থা সচ্ছল হলেই স্ত্রীর গয়না গড়িয়ে দিই, এবং ঐ দড়িবাঁধা মােটা মশারির মধ্যে আমি আমার স্ত্রী এবং মাঝখানে একটি কচি খােকা নিয়ে তালপাতার হাতপাখা খেয়ে রাত্রিযাপন করি। ওগাে, তবু আমরা জন্তু নই। আমাদের কৌচ কার্পেট কেদারা নেই, কিন্তু তবুও আমাদের দয়ামায়া ভালােবাসা আছে। তক্তপােষের উপর তাকিয়া ঠেসান দিয়ে তােমাদের সাহিত্য পড়ি, তবুও অনেকটা বুঝতে পারি এবং সুখ পাই। ভাঙা প্রদীপে খােলা গায়ে তােমাদের ফিলজফি অধ্যয়ন করে তবুও আমাদের ছেলেরা তােমাদেরই মতাে agnostic হয়ে আসছে।― আমরা আবার তােমাদের ভাব বুঝতে পারি নে। তােমাদের সুখ স্বচ্ছন্দতা আরএক রকমের। কৌচ কেদারা তােমরা এত ভালােবাস যে স্ত্রীপুত্র না হলেও চলে। আরামটি তােমাদের আগে, তার পরে তােমাদের ভালােবাসা। আমাদের ভালােবাসা নিতান্তই আবশ্যক, তার পরে আরাম থাক্ বা না থাক্।

 কিন্তু তােমরা খুব সভ্য জাতি, তােমরা অনেক মহৎ কার্য করেছ, অতএব তােমাদের সমস্ত প্রথাকেই মানবের উন্নতির অনুকূল বলে মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমরাও এক কালে উন্নত জাতি ছিলুম, এই বিপুল স্ত্রীপুত্রপরিবারের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে আমাদের পতন হয়েছে― এবং কে বলতে পারে ঐ উত্তরােত্তরবর্ধনশীল স্তুপাকৃত আরামের মধ্যেই তােমাদের সভ্যতার সমাধি হবে না? ভারতবর্ষে পারিবারিক প্রথা ক্রমে এত বিপুল এবং জটিল হয়ে পড়েছিল যে

২৩৯