পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি : খসড়া

চড়ে হাওয়া না খেয়েও তারা এক রকম সুখে আছে, হাওয়া খেয়ে তারা আরও সুখী হয় আরও ভালাে। অন্তঃপুরের সংকীর্ণ সীমার মধ্যে থেকেও তাদের হৃদয়ের অভাব নেই, জ্ঞান ও স্বাধীনতা- বৃদ্ধির সঙ্গে তাদের হৃদয়ের প্রসারতা আরও বাড়ে তো আরও ভালাে। আমার বলার অভিপ্রায় এই যে, আমাদের মধ্যে মন্দ যেমন আছে তেমনি ভালােও আছে― তােমরা যতটা বিভীষিকা দেখ ততটা কিছু নয়। আমার ধর্ম যে মানে না সে চিরনরকে দগ্ধ হবে এ যেমন গোঁড়া খৃষ্টানি, আমাদের মতাে যাদের প্রথা নয় তারা অসুখী এও তেমনি গোঁড়া দ্বৈপায়নতা।

 শুক্রবার [৩১ অক্‌টোবর]। কিন্তু সময়ের পরিবর্তন হয়ে আসছে। এখন আমাদের বাইরে বিক্ষিপ্ত হবার সময়, কেবলমাত্র পরিবার-প্রতিপালন আমাদের একমাত্র কাজ বলে ধরে নিলে চলবে না। ইংরেজের সংঘর্ষে এসে তাদের সঙ্গে প্রতিযােগিতা আমাদের একান্ত আবশ্যক হয়ে পড়েছে। চিরদিন অপমানিত এবং ধিক্‌কৃত হয়ে আর জীবনধারণ করা চলে না। শিক্ষা করতে এবং শিক্ষা দিতে হবে, আপনার শক্তি দেশে বিদেশে পরিচালিত করতে হবে―পৃথিবীতে আপনার উপযােগিতা প্রমাণ করতে হবে। সুতরাং মেয়েদের অবস্থারও পরিবর্তন আবশ্যক। এখন কেবল তাদের গৃহের সামগ্রী করলে চলবে না। তাদেরও জাগ্রত হয়ে আমাদের জাগ্রত করতে হবে। তাদের মধ্যেও এই নবজীবনের উন্মেষ আবশ্যক।

 আজ সন্ধের সময় Hamiltonএর সঙ্গে গল্প হচ্ছিল। সে বলছিল: তােমরা আর যাই করাে, য়ুয়ােপের নকল কোরাে না― Then you are nowhere, you are lost! তােমাদের ধর্ম, তােমাদের সভ্যতা, সহস্র সহস্র বৎসর টিঁকে আছে। কিন্তু চার

২৪১