পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট

 আজ রাত্তিরে জাহাজ বম্বে পৌঁছবে। স্পেশাল ট্রেনে আমাকে যেতে দেবে কি না কে জানে— তা না হলে মেজদাদাদের চিঠি একদিন আগে গিয়ে পৌঁছবে, আমার হঠাৎ গিয়ে পড়বার কল্পনা একেবারে মাটি হয়ে যাবে। কূলে এসে তরী ডােবা একেই বলে।

 আর ডায়ারি বন্ধ করা যাক্।―

 ২ মাস এগারাে দিন কেটে গেল। মনে হচ্ছে কত যুগ। রাত দুপুরের সময় বম্বে পৌঁছনো গেল। স্পেশল ট্রেন ধরতে পারলুম না― তাই ভারতবর্ষে পৌঁছেও মন ভারী বিগড়ে আছে— হঠাৎ গিয়ে পড়ব ব’লে কত কী কল্পনা করেছিলুম, এক দিনের জন্যে সমস্ত ফস্কে গেল। বাড়ি যতই কাছে আসছে মন ততই যেন অস্থির হয়ে উঠছে। gravitationএর নিয়মানুসারে ভার পৃথিবীর যতই নিকটবর্তী হয় তার বেগ ততই বাড়ে— মনেরও সেই নিয়ম দেখছি। কাল সমস্ত রাত এক মুহূর্ত ঘুমােই নি। আজ সকালে তাড়াতাড়ি Watsons Hotelএ বেরিয়ে পড়লুম। এখেনে এসে দেখি আমার টাকার ব্যাগটি জাহাজে ফেলে এসেছি। মাথায় যেন বজ্রাঘাত হল। তার মধ্যে আমার return ticket এবং টাকা। তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে আবার সেই জাহাজে চললুম। সেই পুরােনাে ক্যাবিনের pegএ ব্যাগটি ঝুলছে— ধড়ে প্রাণ এল। এ রকম ফিরে পেলে হারিয়ে সুখ আছে। ব্যাগটি কাঁধের উপর ঝুলিয়ে সমস্ত পৃথিবী আনন্দময় বােধ হল। আমার মতাে লােকের ঘর ছেড়ে এক পা বেরোনাে উচিত নয়। যখন আমার biography বেরােবে তখন এই সমস্ত অন্যমনস্কতার দৃষ্টান্তগুলাে পাঠকদের কাছে ভারী আমােদজনক এবং কবির উপযুক্ত শােনাবে, কিন্তু আপাততঃ ভারী অসুবিধে। এই ব্যাগ ভুলে যাবার সম্ভাবনা কাল সন্ধেবেলায় একবার মনে উদয় হয়েছিল। তার পরে মনকে বিশেষ করে

২৪৪