পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

অমূলক অহংকার, পরস্পরের মধ্যে অনর্থক ব্যবধানের সৃষ্টি করা হয়। এই পবিত্রতার দোহাই দিয়ে এই বিজাতীয় মানব -ঘৃণা আমাদের চরিত্রের মধ্যে যে কীটের ন্যায় কার্য করে তা অনেকে অস্বীকার করে থাকেন। তাঁরা অম্লানমুখে বলেন, কই, আমরা ঘৃণা কই করি?— আমাদের শাস্ত্রেই যে আছে ‘বসুধৈব কুটুম্বকং’। অত্যন্ত পরুষভাষী রুক্ষস্বভাব ব্যক্তিও নিজ আচরণের প্রশংসাচ্ছলে বলতে পারেন, ‘আমার হৃদয় নিরতিশয় উদার, কারণ নিতান্ত নিঃসম্পর্ক ব্যক্তিকেও আমি সহজেই শ্যালক সম্ভাষণ করে থাকি। এবং সে হিসাবে গণনা করে দেখতে গেলে প্রায় আমার বসুধৈব কুটুম্বকং।’ শাস্ত্রে কী আছে, এবং বুদ্ধিমানের ব্যাখ্যায় কী দাঁড়ায় তা বিচার্য নয়, কিন্তু আচরণে কী প্রকাশ পায় এবং সে আচরণের আদিম কারণ যাই থাক্ তার থেকে সাধারণের চিত্তে স্বভাবতই মানবঘৃণার উৎপত্তি হয় কি না এবং কোনাে-একটি জাতির আপামর সাধারণে অপর সমস্ত জাতিকে নির্বিচারে ঘৃণা করবার অধিকারী কি না তাই বিবেচনা করে দেখতে হবে।

 আর-একটি কথা— জড়পদার্থই বাহ্য মলিনতায় কলঙ্কিত হয়। শখের পােষাকটি প’রে যখন বেড়াই তখন অতি সন্তর্পণে চলতে হয়। পাছে ধুলাে লাগে, জল লাগে, কোনাে রকম দাগ লাগে, অনেক সাবধানে আসন গ্রহণ করতে হয়। পবিত্রতা যদি পােষাক হয় তবেই ভায়ে ভয়ে থাকতে হয় পাছে এর ছােঁওয়া লাগলে কালাে হয়ে বায়, ওর হাওয়া লাগলে চিহ্ন পড়ে। এমন একটি পােযাকি পবিত্রতা নিয়ে সংসারে বাস করা কী বিষম বিপদ! জনসমাজের রণক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে এবং বঙ্গভূমিতে ঐ অতি পরিপাটী পবিত্রতাকে সামলে চলা অত্যন্ত কঠিন হয় ব’লে শুচিবায়ুগ্রস্ত দুর্ভাগা জীব আপন বিচরণক্ষেত্র অত্যন্ত সংকীর্ণ করে আনে; আপনাকে কাপড়টা-

২০