পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

 নিজের মধ্যে সজীব মনুষত্ব থাকলে তবেই প্রাচীন এবং আধুনিক মনুষ্যত্বকে, পূর্ব ও পশ্চিমের মনুষ্যত্বকে, নিজের ব্যবহারে আনতে পারা যায়।

 মৃত মনুষ্যই যেখানে পড়ে আছে সম্পূর্ণরূপে সেইখানকারই। জীবিত মনুষ্য দশ দিকের কেন্দ্রস্থলে; সে ভিন্নতার মধ্যে ঐক্য এবং বিপরীতের মধ্যে সেতুস্থাপন ক’রে সকল সত্যের মধ্যে আপনার অধিকার বিস্তার করে; এক দিকে নত না হয়ে চতুর্দিকে প্রসারিত হওয়াকেই সে আপনার প্রকৃত উন্নতি জ্ঞান করে।

 আমার আশঙ্কা হচ্ছে, প্রবন্ধটা কমে অনেকটা উপদেশের মতো শুনতে হয়ে আসছে— এজন্যে আমি সর্বসাধারণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। এ রকম দুরভিসন্ধি আমার গোড়ায় ছিল না। তৎপক্ষে আমার কতকগুলি গুরুতর বাধাও আছে।

 অল্পদিন হল আমার কোনো লেখা যদি আমার দুরদৃষ্টক্রমে কারও অবিকল মনের মতো না হত তিনি বলতেন আমি তরুণ, আমি কিশোর, এখনো আমার মতের পাক ধরে নি। আমার এই তরুণ বয়সের কথা আমাকে এতকাল ধরে এতবার শুনতে হয়েছে যে শুনতে শুনতে আমার মনে এই একটা সংস্কার অজ্ঞাতসারে বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, এই বাংলাদেশের অধিকাংশ ছেলেই বয়স সম্বন্ধে প্রতিবৎসর নিয়মিত ডবল প্রোমোশন পেয়ে থাকে, কেবল আমিই পাঁচজনের পাকচক্রে কিম্বা নিজের অক্ষমতা-বশতঃ কিছুতেই কিশোরকাল উত্তীর্ণ হতে পারলুম না।

 এই তো গেল পুর্বের কথা। আবার সম্প্রতি যদি আমার স্বভাব-বশতঃ আমার কোনো রচনায় আমি এমন একটা বিষম অপরাধ করে বসি যাতে করে কারও সঙ্গে আমার মতের অনৈক্য হয়ে পড়ে তা হলে তিনি বলেন আমি সম্পদের ক্রোড়ে লালিত

৩১