পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

উপেক্ষা এবং উপহাস-যোগ্য জ্ঞান করি। এমন-কি, রমণীদের গাড়িতে চড়িয়ে স্বাস্থ্যকর বায়ু সেবন করানোকে আমাদের দেশের পরিহাসরসিকেরা একটা পরম হাস্যরসের বিষয় বলে স্থির করেন। কিন্তু তবুও মোটের উপর বলা যায় আমাদের স্ত্রী কন্যারা সর্বদাই বিভীষিকারাজ্যে বাস করছেন না, এবং তাঁরা সুখী।

 তাঁদের মানসিক শিক্ষা সম্বন্ধে কথা বলতে গেলে এই প্রশ্ন ওঠে, আমরা পুরুষেরাই কি খুব বেশি শিক্ষিত? আমরা কি এক রকম কাঁচা-পাকা জোড়াতাড়া অদ্ভুত ব্যাপার নই? আমাদের কি পর্যবেক্ষণশক্তি বিচারশক্তি এবং ধারণাশক্তির বেশ সুস্থ সহজ এবং উদার পরিণতি লাভ হয়েছে? আমরা কি সর্বদাই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে অপ্রকৃত কল্পনাকে মিশ্রিত করে ফেলি নে এবং অন্ধসংস্কার কি আমাদের যুক্তিরাজ্যসিংহাসনের অর্ধেক অধিকার করে সর্বদাই অটল এবং দাম্ভিক ভাবে বসে থাকে না? আমাদের এই রকম দুর্বল শিক্ষা এবং দুর্বল চরিত্রের জন্য সর্বদাই কি আমাদের বিশ্বাস এবং কার্যের মধ্যে একটা অদ্ভুত অসংগতি দেখা যায় না? আমাদের বাঙালিদের চিন্তা এবং মত এবং অনুষ্ঠানের মধ্যে কি এক প্রকার শৃঙ্খলাসংযমহীন বিষম বিজড়িত ভার লক্ষিত হয় না?

 আমরা সুশিক্ষিতভাবে দেখতে শিখি নি, ভাবতে শিখি নি, কাজ করতে শিখি নি, সেই জন্যে আমাদের কিছুর মধ্যেই স্থিরত্ব নেই। আমরা যা বলি, যা করি, সমস্ত খেলার মতো মনে হয়; সমস্ত অকালমুকুলের মতো ঝরে গিয়ে মাটি হয়ে যায়। সেইজন্যে আমাদের রচনা ডিবেটিং ক্লাবের এসের মতো, আমাদের মতামত সূক্ষ্ম তর্কচাতুরী প্রকাশের জন্য, জীবনের ব্যবহারের জন্য নয়— আমাদের বুদ্ধি কুশাঙ্কুরের মতো তা কিন্তু তাতে অস্ত্রের বল নেই। আমাদেরই যদি এই দশা তো আমাদের স্ত্রীলোকদের কতই বা

৪৭