পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

শিক্ষা হবে! স্ত্রীলােকেরা স্বভাবতই সমাজের যে অন্তরের স্থান অধিকার করে থাকেন সেখানে পাক ধরতে কিঞ্চিৎ বিলম্ব হয়। য়ুরােপের স্ত্রীলোেকদের অবস্থা আলােচনা করলেও তাই দেখা যায়। অতএব আমাদের পুরুষদের শিক্ষার বিকাশ-লাভের পূর্বেই যদি আমাদের অধিকাংশ নারীদের শিক্ষার সম্পূর্ণতা প্রত্যাশা করি তা হলে ঘােড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার প্রয়াস প্রকাশ পায়।

 তবে এ কথা বলতেই হয় ইংরাজ স্ত্রীলােক অশিক্ষিত থাকলে যতটা অসম্পূর্ণস্বভাব থাকে আমাদের পরিপূর্ণ গৃহের প্রসাদে আমাদের রমণীর জীবনের শিক্ষা সহজেই তার চেয়ে অধিকতর সম্পূর্ণতা লাভ করে।

 কিন্তু এই বিপুল গৃহের ভারে আমাদের জাতির আর বৃদ্ধি হতেই পেলে না। গার্হস্থ্য উত্তরােত্তর এমনি অসম্ভব প্রকাণ্ড হয়ে পড়েছে যে, নিজ গৃহের বাহিরের জন্যে আর কারও কোনাে শক্তি অবশিষ্ট থাকে না। অনেকগুলায় একত্রে জড়ীভূত হয়ে সকলকেই সমান খর্ব করে রেখে দেয়। সমাজটা অত্যন্ত ঘনসন্নিবিষ্ট একটা জঙ্গলের মতাে হয়ে যায়, তার সহস্র বাধাবন্ধনের মধ্যে কোনােএক জনের মাথা ঝাড়া দিয়ে ওঠা বিষম শক্ত হয়ে পড়ে।

 এই ঘনিষ্ঠ পরিবারের বন্ধনপাশে পড়ে এ দেশে জাতি হয় না, দেশ হয় না, বিশ্ববিজয়ী মনুষ্যত্ব বৃদ্ধি পায় না। পিতামাতা হয়েছে, পুত্র হয়েছে, ভাই হয়েছে, স্ত্রী হয়েছে, এবং এই নিবিড় সমাজশক্তির প্রতিক্রিয়াবশে অনেক বৈরাগী সন্ন্যাসীও হয়েছে, কিন্তু বৃহৎ সংসারের জন্যে কেউ জন্মে নি— পরিবারকেই আমরা সংসার বলে থাকি।

 কিন্তু য়ুরােপে আবার আর-এক কাণ্ড দেখা যাচ্ছে। য়ুরােপীয়ের গৃহবন্ধন অপেক্ষাকৃত শিথিল ব’লে তাঁদের মধ্যে অনেকে যেমন সমস্ত ক্ষমতা স্বজাতি কিম্বা মানব -হিতব্রতে প্রয়ােগ করতে সক্ষম

৪৮