পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

সন্ধ্যাবেলায় ঐ শ্বাপদগুলাে এক লম্ফে স্কন্ধে এসে পড়বার সুযােগ অন্বেষণ করে।

 যা হােক, আমার মতাে অভাজন লােকের পক্ষে য়ুরােপীয় সভ্যতার পরিণাম -অন্বেষণের চেষ্টা অনেকটা আদার ব্যাপারীর জাহাজের তথ্য নেওয়ার মতাে হয়। তবে একটা নির্ভয়ের কথা এই যে, আমি যে-কোনাে অনুমানই ব্যক্ত করিনা কেন, তার সত্য-মিথ্যা-পরীক্ষার এত বিলম্ব আছে যে ততদিনে আমি এখানকার দণ্ড পুরস্কারের হাত এড়িয়ে বিস্মৃতিরাজ্যে অজ্ঞাতবাস গ্রহণ করব। অতএব এ-সকল কথা যিনি যে ভাবেই নিন আমি তার জবাবদিহি করতে চাই না। কিন্তু য়ুরােপের স্ত্রীলােক সম্বন্ধে যে কথাটা বলছিলুম সেটা নিতান্ত অবজ্ঞার যােগ্য বলে আমার বােধ হয় না।

 যে দেশে গৃহ নষ্ট হয়ে ক্রমে হােটেল-বৃদ্ধি হচ্ছে― যে-যার নিজে নিজে উপার্জন করছে এবং আপনার ঘরটি, easy-chairটি, কুকুরটি, ঘােড়াটি, বন্দুকটি, চুরটের পাইপটি এবং জুয়া খেলবার ক্লাবটি নিয়ে নির্বিঘ্ন আরামের চেষ্টায় প্রবৃত্ত আছে সেখানে নিশ্চয়ই মেয়েদের মৌচাক ভেঙে গেছে। পূর্বে সেবক-মক্ষিকারা মধু অন্বেষণ করে চাকে সঞ্চয় করত এবং রাজ্ঞী-মক্ষিকারা কর্তৃত্ব করতেন; এখন স্বার্থপরগণ যে-যার নিজের নিজের চাক ভাড়া করে সকালে মধু-উপার্জন-পূর্বক সন্ধ্যা পর্যন্ত একাকী নিঃশেষে উপভােগ করছে। সুতরাং রানী-মক্ষিকাদের এখন বেরােতে হচ্ছে, কেবল মাত্র মধুদান এবং মধুপান করবার আর সময় নেই। বর্তমান অবস্থা এখনাে তাঁদের স্বাভাবিক হয়ে যায় নি, এই জন্যে অনেকটা পরিমাণে অসহায়ভাবে তাঁরা ইতস্ততঃ ভন্ ভন্ করে বেড়াচ্ছেন। আমরা আমাদের মহারানীদের রাজত্বে বেশ আছি এবং তাঁরাও আমাদের অন্তঃপুর অর্থাৎ আমাদের পারিবারিক সমাজের

৫১