পাতা:য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি

মধ্যে একটা চেষ্টা চেতনা চাতুরী লক্ষিত হয়। আমাদের মেয়েরা যে উলঙ্গতা পরিধান পূর্বক অষ্টপ্রহর বিচরণ করে থাকেন তার মধ্যে কোনো উদ্দেশ্য চেষ্টা কিম্বা চেতনা নেই, এই জন্যে আমাদের চোখে সেটা সচরাচর বিবসনতা বলে ঠেকে না। অবশ্য, সময়বিশেষে তাঁরা-যে দ্রুত হস্তক্ষেপে মস্তক বেষ্টন করে প্রায় নাসিকার প্রান্তভাগ পর্যন্ত ঘোমটা আকর্ষণ করে দেন না এ রকম ঘোরতর নির্লজ্জতার অপবাদ তাঁদের কেউ দিতে পারে না।

 ৩১ আগস্ট্। আজ রবিবার। প্রাতঃকালে উঠে উপরের ডেকে চৌকিতে বসে সমুদ্রের বায়ু সেবন করছি, এমন সময় নীচের ডেকে খৃস্টানদের উপাসনা আরম্ভ হল। যদিও জানি এদের মধ্যে অনেকেই শুষ্কভাবে অভ্যস্ত মন্ত্র আউড়ে কল-টেপা আর্গিনের মতো গান গেয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু তবু এই-যে দৃশ্য― এই-যে গুটিকতক চঞ্চল ছোটো ছোটো মনুষ্য অপার সমুদ্রের মাঝখানে স্থির বিনম্রভাবে দাড়িয়ে গম্ভীর সমবেত কণ্ঠে এক চির-অজ্ঞাত অনন্ত রহস্যের প্রতি ক্ষুদ্র মানবহৃদয়ের ভক্তি-উপহার প্রেরণ করছে, এ অতি আশ্চর্য।

 কিন্তু এর মধ্যে হঠাৎ এক-একবার অট্টহাস্য শোনা যাচ্ছে। গতরাত্রের সেই ডিনার-টেবিলের নায়িকাটি উপাসনায় যোগ না দিয়ে উপরের ডেকে বসে তাঁরই একটি উপাসক যুবকের সঙ্গে কৌতুকালাপে নিমগ্ন আছেন। মাঝে মাঝে উচ্চহাস্য করে উঠছেন, আবার মাঝে মাঝে গুন্‌গুন্‌ স্বরে ধর্মসংগীতেও যোগ দিচ্ছেন। আমার মনে হল সরল ভক্তমণ্ডলীর মাঝখানে শয়তান পেটিকোট প’রে এসে মানবের উপাসনাকে পরিহাস করছে।

 আজ আহারের সময় একটি নূতন সংবাদের সৃষ্টি করা গেছে। ছোটো টেবিলটিতে আমরা তিন জনে ব্রেকফাস্ট্ খেতে বসেছি। একটা শক্ত গোলকার রুটির উপরে ছুরি চালনা করতে গিয়ে

৮৩