পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভঙুলমামার বাড়ী Գ: মেঝেতে খুব জঙ্গল গজিয়েচে, গাথুনির ফাকে ফঁাকে আমরুল শাকের গাছ , বাড়ির উঠোনে বড় একটা সজনে গাছে প্রথম ফাগুনে ফুলের খই ফুটেচে। ঘুরে ঘুরে দেখলুম, ভঙুলমামার বাড়িতে তিনটে ঘর, একটা ছোট দালান, মাঝে একটা সিড়ির ঘর, আট-দশ ধাপ সিড়ি গাথা হয়ে গেছে। ওদিকের বড় ঘরটা বোধ হয়। ভঙুলমামার, মাঝের ঘরটাতে ছেলেমেয়েরা থাকবে। ভঙুলমামার বাপ আছে ? কে জানে ? তিনি বোধ হয় থাকবেন সিড়ির এপাশের ঘরটাতে । রান্নাঘর কোথায় হবে ? বোধ হয় উঠোনের এক পাশে ওই সজনে গাছটার তলায়। ভঙুলমামা ছেলেমেয়ে নিয়ে যখন এসে বাস কববে, তখন এদের উঠোনে কি আর এমন জঙ্গল থাকবে ? ছেলেমেয়েরা ছুটোছুটি দৌড়াদৌড়ি ক’রে খেলবে, হয়ত বাড়িতে সত্যনারায়ণের সিন্নি দেবে পূর্ণিমায় কি সংক্রান্তিতে সংক্রাস্তিতে। পুকুর পাড়ের এ জংলী চেহারা তখন একেবারে বদলে যাবে যে ! আমার মামার বাড়ির এ পাড়াতে এক ঘর লোক বাড়বে • • • ও-পাড়া থেকে খেলা ক’রে ফেরবার পথে সন্ধ্যে হয়ে গেলেও অার ভাবনা থাকবে না • • • ওদের বাড়িতে আলো জলবে, ছেলেমেয়ের কথা বলবে, কিসের আর তখন ভয় ? দিব্যি চলে যাব। আরও বছর দুই কেটে গোল । থার্ড ক্লাশে পড়ি । মামার বাড়ি একাই গেলুম। একাই এখন সব জায়গায় যাই । ভঙুলমামার বাড়ির ছাদ-পেটানো হয়ে গিয়েছে, সিমেণ্টেব নোজে, দালানের বাইরে রোয়াক হয়েছে কবে আমি দেখিনি তো ? রোয়াকের ওপর কেমন টিনের ঢালু ছাদ ! কেবল একটুখানি এখনও বাকী, দরজা জানালায় এখনও কপাট বসানাে হয়নি। বাঃ, ভঙুলমামার বাড়ি তাহলে হয়ে গেল! ভঙুলমামা নাকি আজকাল বড় সুদখোর হয়ে উঠেছেন, মাঝে মাঝে গায়ে আসেন, চড়া সুদে লোকজনকে টাকা ধার দেন, বাড়ি দেখাশুনো করেন, আবার চলে যান। মাস-কতক পরে আবার এসে কাবুলীওয়ালার মত চড়াও হয়ে সুদ আদায় করেন। গায়ের লোক তঁর নাম রেখেচে রত্নদত্ত ।