পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভঙুলমামার বাড়ী Ο Σ. বুঝলুম পাচিল পাতকুয়া এখনও বাকী। ভঙুলমামার বাড়ি এখনও শেষ হয়নি, এখনও কিছু বাকী আছে। কিন্তু এতদিন ধ’বে ব্যাপারটা চলচে যে এক দিক গড়ে উঠতে অন্য দিকে ধরেছে ভাঙন । এর পরে মামার বাড়ি গিয়ে দু-একবার দেখেছি। ভঙুলমামা দু-পাচ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে আছেন । এটা সারাচ্ছেন, ওটাতে বেড়া বঁধছেন, এগাছটা খুড়ছেন, ও-গাছটা কাটছেন । ছেলেরা আসতে চায় না। কলকাতা ছেড়ে । নিজেকেই আসতে হয়, দেখাশুনো করতে হয় ব’লে একদিন সলজ কৈফিয়ৎ ও দিলেন। -- পাচিল ? হ্যা তা পাচিল—সম্প্রতি একটু টানাটানি যাচ্ছে। --সামনের বর্ষায়, • • ঘরদের বেঁধেছি। সারাজীবন খেটে, ওই আমার বড় আদরের জায়গাতোরা না থাকিস, আমিই গিয়ে থাকি । আমি বললুম,-ওখানে কেমন ক’রে থাকেন ? সারা গায়েই ত মানুষ নেই, মামার বাড়ির পাড়া ত একেবারে জনশূন্য হয়ে গেছে । -কি করি বাবা, ওই বাড়িখানার ওপর বড় দিম। আমার যে । দেখ, চিরকাল পরের বাসায়, পবের বাড়িতে মানুষ হয়ে ঘরের কষ্ট বড় পেয়েছিলুম। --তাই ঠিক করি বাড়ি একখানা করবই । ছেলেবেলা থেকে ওই গায়েই কাটিয়েছি, ওখানটা ছাড়া আর কোথাও মন বসে না । চিরকাল ভাবতুমি রিটায়ার ক’রে ওখানেই বাস করব । একটা আস্তানা ত চাই, এখন না হয় ছেলেপিলে নিয়ে বাসায় বাসায় ঘুরছি, কিন্তু এর পরে দাড়াব কোথায় ? তাই জলাহার ক’রেও সারাজীবন কিছু কিছু সঞ্চয় ক’রে ওই বাড়িখানা করেছিলুম। তা ওরা তো কেউ এল না-আমি নিজেই থাকি । না থাকলে বাড়িখানা ত থাকবে না-আর এককালে না-এককালে ছেলেদের ত এসে বসতেই হবে বাড়িতে। কলকাতার বাসায় বাসায় ত চিরকাল কাটবে না ।