পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SN যাত্রাবদল তারপর মামাদের মুখে ভঙুলমামার কথা আরও সব জানা গেল। ভঙুলমামা এক বিজন বনের মধ্যে নিজের বাড়িখানায় থাকেন। তার এখনও দৃঢ় বিশ্বাস তঁার ছেলেরা শেষ পৰ্য্যন্ত ওই বাড়িতেই গিয়ে বাস করবে। তিনি এখনও এ-জায়গাটা ভাঙছেন, ওটা গড়ছেন, নিজের হাতে দা দিয়ে জঙ্গল সাফ করছেন । ছেলেদের সঙ্গে বনে না-ওই বাড়ির দরুণই মনান্তর, স্ত্রীও ছেলেদের দিকে । ছেলেরা বােপকে সাহায্যও কবে না। ভঙুলমামা গাঁয়ে একখানা ছোট মুদির “দোকান কবেছিলেন-লোক নেই তার কিনবে কে ? যা দু-একঘর খদেব জুটেছিল-ধার নিয়েই দোকান উঠিয়ে দিলে। এখন ভঙুলমামা। এ-গাঁ ও-গা বেড়িয়ে কোনো চাষার বাড়ি থেকে দু-কাঠা চাল, কারুর বাড়ির পাঁচটা বেগুন -এই রকম ক’রে চেয়েচিন্তে এনে বাড়িতে হাড়ি চড়িয়ে দুটো ফুটিয়ে খান । তারপর ধীৰে ধীবে অনেক বছর কেটে গেল । আমি ক্ৰমে বি-এ পাস করে। চাকরিতে ঢুকলুম। মামার বাড়ি আর যাইনে, কারণ সে-গ্রাম আর যাবার যোগ্য নেই। মামার বাড়ির পাড়ায গাঙলীরা, রায়েরা, ভড়েরা সব একে একে মরে হেজে গেল, যারা অবশিষ্ট রইল। তারা বিদেশে চাকরি করে, ম্যালেরিয়ার ভয়ে গ্রামের ত্ৰিসীমানা মাড়ায় না। ও-পাড়াতেও তাই জীবন মজুমদারের প্ৰকাণ্ড দোতলা বাড়ি ছাদ ভেঙে ভূমিসাৎ হয়ে গিয়েছে, শুধু একদিকের দোতলাসমান দেয়ালটা দাঁড়িয়ে আছে। যে পূজোর দালানে ছেলেবেলায় কত উৎসব দেখেছি, এখন সেখানে বড় বড় জগডুমুরের গাছ, দিনেই বোধ হয় বাঘ লুকিয়ে থাকে। বিখ্যাত রায়দীঘি মাজে গিয়েছে, দামে বোঝাই, জল দেখা Yi, গরু-বাছুর কচুরীপানার দামের ওপর দিয়ে হেঁটে দিব্যি পাব হ’তে পারে। সন্ধ্যা রাতেই গ্রাম নিশুতি হয়ে যায়। দু-এক ঘব নিরুপায় গৃহস্থ যারা নিতান্ত অর্থাভাবে এখনও পৈতৃক ভিটতে ম্যালেরিয়া-জীর্ণ হাতে সন্ধ্যািদীপ জালাচ্ছে, সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হ’তে-না-হতেই তারা প্ৰদীপ নিবিয়ে শয্যা আর্ক্স করে—