পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 যাত্রাবদল জুতো জোড়াটা পুরোনো হ’লেও এখনও দু-তিন মাস যাবে। বাড়িতে একজোড়া রয়েছে, আঙলে বড় লাগে ব’লে খালি পায়েই তিনি বাড়ির বার হয়ে গেলেন। আমি চেয়ে চেয়ে দেখলুম শীর্ণকায় ভঙুলমামা ভারী চাল ডালের মোটের ভারে একটু সামনের দিকে ঝুকে চটিজুতোর ফটাং ফটাং শব্দ করতে করতে ষ্ট্রেশনের পথে চলেছেন । হঠাৎ আমার মনে তার উপরে আমার বল্যের সেই রহস্যময় স্নেহ ও অনুকম্পার অনুভূতিটুকু কতকাল পরে আবার যেন ফিরে এল। আমি চেচিয়ে বললুম-একটু দাড়ান মামা, আপনাকে তুলে দিয়ে আসি। ভঙুলমামার পুটুলিটা নিজের হাতে নিলুম, টিকিট ক’রে তঁকে গাড়ীতে তুলেও দিলুম। ট্রেনে ওঠবার সময় একমুখ হেসে বললেন -যেও না হে একদিন, বাড়িটা দেখে এস আমার-খাসা করেছি --কেবল পাচিলটা এখনও যা বাকি । কি করি, আমার হাতে আজকাল আর ত কিছু নেই, ছেলেরা নিজেদেব বাসার খরচই চালিয়ে উঠতে পারে নাঅবিশ্যি ওদের জন্যেই তা সব দেখি, চেষ্টায় আছি-সামনের বছরে যদি• • • ভঙুলমামার সঙ্গে আর আমার দেখা হয় নি। কিন্তু এর মাস-কতক পরে তার বড় ছেলে হরিসাধনের সঙ্গে কলকাতায় দেখা হয়েছিল । ম্যাকমিলান কোম্পানীর বাড়িতে চাকরি করে, জিনের কোটি গায়ে, হাতে বইয়ের আকারে খাবারের কোটাে, মুখে একগাল পান-বৌবাজারের ফুটপাথ দিয়ে বেলা দশটার সময় আপিসে যাচ্ছে। আমিই ভঙুলমামার কথা তুললুম। হরিসাধন বললেবাবা দেশের বাড়িতেই আছেন- আমরা বলি আমাদের সংসারে এসে থাকুন, তাতে রাজি নন। বুদ্ধিাশুদ্ধি ত কিছু ছিল না। বাবার, নেইও-সারা জীবন যা রোজগার করেছেন ওই জঙ্গলের মধ্যে এক বাড়ি করতে গিয়ে সব নষ্ট করেছেন, নইলে আজ হাজার চার-পাঁচ টাকা হাতে জমতো। ও-গায়ে যাবেই বা কে ? রামোঃ, যেমন জঙ্গল তেমনি ম্যালেরিয়া—তাছাড়া লোকজন