পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভঙুলমামার বাড়ী Gł নেই, অসুখ হ’লে একটা ডাক্তার নেই-চার-পাচ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে বাড়ির পিছনে, বেচিতে গেলে এখন ইট কাঠের দরেও বিক্রী হবে ভেবেছেন ? কে নিতে যাবে, পাগল আপনি ? আমি বললুম-কথাটা ঠিক বটে। কিন্তু ভেবে দেখ, তোমার বাবা যখন বাড়িটা প্ৰথম আরম্ভ করেছিলেন, তখন জাজিল্যমান গ্রাম। বাড়িটা তৈরী করতে এত দেরি হয়ে গেল যে ইতিমধ্যে গ্যা হয়ে গেল শ্মশান, লোকজন উঠে অন্যত্র চলে গেল, আর সেই সময় তোমাদের বাড়ির গাথুনিও শেষ হ'ল। কার দোষ দেবে ? তারপরে ভঙুলমামার আর কোন সংবাদ রাখিনি অনেক কাল। বছর-তিনেক আগে একবার মেজমামা চেঞ্জে গিয়েছিলেন দেওঘরে। পূজোর ছুটিতে আমিও সেখানে যাই । তার মুখেই শুনলুম ভঙুলমামা সেই শ্রাবণেই মারা গিয়েছেন। অসুখ-বিসুখ হয়ে ক’দিন ঘরের মধ্যেই ছিলেন, কেউ বিশেষ দেখাশুনা করেনি, আর আছেই বা কে গায়ে যে দেখবে ? এ অবস্থায় ঘরের মধ্যে ম’রে পড়েছিলেন, দু-তিন দিন পরে সবাই টের পায়, তখন ছেলেদের টেলিগ্রাম করা হ’ল। ভঙুলমামার এইখানেই শেষ । এর পর আমি আর কখনও মামার বাড়ির গ্রামে যাইনি, হয়ত আর কোন দিন যাবও না, বাড়িটাও আর দেখিনি, কিন্তু জ্ঞান হয়ে পৰ্য্যন্ত যে বাড়িটা গাথা হ’তে দেখেছি, সেটা আমার মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত স্থান অধিকার ক’রে আছে। আমার কল্পনায় দেশের মামার বাড়ির গ্রামের, একগলা বনের মধ্যে শীতের দিনের সন্ধ্যায়। ভঙুলমামার বাড়িটা একটা কায়াহীন, অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন রূপ নিয়ে মাঝে মাঝে দাড়িয়ে থাকে • • • সেই গাছ-গজানো উঠোনটাতে ঢোকবার পথ বনে ঢাকা, দরজা জানালার কপাট নেই, থামে থামে কাঠ-থামাল পৰ্য্যন্ত গাথা হয়েছে ! • • •