পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V)R যাত্রাবদল গৃহস্থবধু ভারবাহী পশুর মত উদয়াস্ত খাটুচে হয়ত পেটপুরে দু-বেলা খেতেও পায় । না, ফর্স কাপড় বছরে পরে হয়ত দু-দিন কি তিন দিন, হয়ত সেই পুজোর সময় একবার, কোন সাধ-আহলাদ পূরে না মনের, কিছু দেখে না, জানে না, বোঝে না, মনে বড় কিছু আশা করতে শেখেনি, বাইরের দুনিয়ার কিছু খবর রাখে না-পাড়াগায়ের ডোবার ধারের বঁাশবাগানের ছায়ায় জীবন তাদের আরম্ভ, তাদের সকল সুখ-দুঃখ, আনন্দ, আশা-নিরাশার পরিসমাপ্তিও ঐখানে । অবনীর বীে গৃহস্থ বধুদেরই একজন। অন্তত: ওদের একজনও তার সাধের স্বৰ্গকে হাতে পেয়েচে । অন্ধকাবের মধ্যে আমি বসে বসে এই কথাই ভাবছিলাম । আমি কল্পনা করবার চেষ্টা করলাম অবনীর বৌকে, যখন সে প্রথম নিসু চৌধুবীর বাড়িতে এল-কি ভাবলে অত বড় বাড়িটা দেখে, • • • অতি ঘরদোর । • • • যখন প্ৰথম জানলে যে সংসারের দুঃখ দূর হয়েচে, প্রথমে যখন সে তার ছেলেমেয়েদেব ফর্সা কাপড় পরতে দিতে পারলে, আমি কল্পনা করলাম দশঘরার হাট থেকে অবনী বড় মাছ, সন্দেশ, ছানা কিনে বাড়িতে এসেচে। • • অবনীর বৌ এই প্ৰথম স্বচ্ছলতার মুখ দেখলে। তার সে খুশী-ভরা চোখমুখ অন্ধকারের মধ্যে দেখতে পাচ্চি।-- ট্রেন আর একটা ষ্টেশনে এসে দাড়িয়েচে । শান্তিরাম আলোয়ান মুড়ি দিয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে, মাঝে মাঝে চুলচে । ষ্টেশনে পানের বোঝা উঠচে । শান্তিরামকে বললাম-শাস্তিারাম, ঘুমুচ্চ নাকি ? আমি একটা গল্প জানি এই রকমই, তোমার গল্পটা শুনে আমার মনে পডেচে সেটা শুনবে ?-- কিন্তু শান্তিরাম এখন গল্প শুনবাব মেজাজে নেই। সে আরামে ঠেস দিয়ে আরও ভাল ক’রে মুড়িসুড়ি দিয়ে বসলো। সে একটু ঘুমুবে । পূৰ্ণবাবুর কথা আমার মনে পড়েচে, শান্তিরামের গল্পটা শুনবার পরে এখন। পূৰ্ণবাবু আমিন ছিল, পাটনায় আমবা একসঙ্গে কাজ করেছি। পূৰ্ণবাবুর বয়স তখন ছিল পঞ্চাশ কি বাহান্ন বছর । লম্বা রোগা চেহারা, বেজায় আফিম খেতে