পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রাবদল وال۹ এ-সব আজ ত্ৰিশ বছর আগেকার কথা । এই ত্রিশ বছরে পূর্ণবাবু আমোদপ্রিয়, সৌধীনচিত্ত, অপরিণামদর্শী যুবক থেকে কন্যাদায়গ্ৰস্ত, রোগ জীৰ্ণ, অকাল-বৃদ্ধ দারিদ্র্যভারে কুজদেহ ত্ৰিশ টাকা মাইনের আমীনে পরিণত হয়েচেন-এখন আর মনে তেজ নেই, শরীরে বল নেই, খেলে হজম করতে পারেন না, চুল অধিকাংশই পেকে গিয়েচে, কসের অনেকগুলো দাত পড়ে গেলেও পয়সা অভাবে বাধাতে পারেন না ব’লে গালে টোল খেয়ে যাওয়ায় বয়সের চেয়েও বুড়ো দেখায়। বাড়ির অবস্থাও ততোধিক খারাপ। পনেরো টাকা ভাড়ার এদো ঘরে বাস করার দরুণ স্ত্রী ছেলে মেয়ে সকলেই নানারকম অসুখে ভোগে-অথচ উপযুক্ত চিকিৎসা হয় না। তিনটি মেয়ের বিয়েতে পূৰ্ণবাবু একেবারে সর্বস্বাস্ত হয়ে গিয়েচেন, অথচ মেয়ে তিনটির প্রথম দুটি ঘোর অপাত্রে পড়েচে । বড় জামাই বৌবাজারে দরজীর দোকান করে, ঘোর মাতাল, কুচরিত্র-বাড়িতে স্ত্রীকে মারপিট করে প্রায়ই, তবুও সেখানে মেয়েকে মুখগুজে প’ড়ে থাকতে হয়-বাপের বাড়ি এলে শোবার জায়গাই দেওয়া যায় না । মেজ জামাই মাতাল নয় বটে, কিন্তু তার এক পয়সা রোজগারের ক্ষমতা নেই-রেলে সামান্য কি চাকুরী করে, সে সংসারে সবাই একবেল খেয়ে থাকে, তাই নাকি অনেক দিন থেকে নিয়ম | আর একবেলা সকলে মুড়ি খায়। মেজমেয়ের দুঃখ পূৰ্ণবাবু দেখতে পারেন না। ব’লে মাঝে মাঝে তাকে বাড়িতে আনিয়ে রাখেন ; সেখানে এলে তবু মেয়েটা খেতে পায় পেট পূরে দু-বেলা। আজকাল প্রায়ই জ্বরে ভোগে, শরীরও খারাপ হয়ে গিয়েচে, ডাক্তারে আশঙ্কা করেচে। থাইসিস। বুড়ী পিসীমা কিন্তু এখনও বেঁচে। এখনও বুড়ী গঙ্গাস্নানে যায়। নিজের হাতে রোধে খায়, বয়স নব্বইএর কাছাকাছি, কিন্তু এখনও চােখের তেজ বেশ, দাত পড়েনি, বুড়ী একেবারে অশ্বখামার পরমায়ু নিয়ে জন্মেছে, এদিকে যারা তার মরণের