পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

 ২ যাত্রাবদল

কেমন অন্যমনস্কভাবে মাঝে মাঝে বাঁ-ধারের মজা পুকুরটার দিকে চাইছিলেন। হঠাৎ বললেন-মুড়ি আসুক, একটা গল্প বলি ততক্ষণ। শুনুন, ইন্সপেক্টারবাবু। এই রকম শীতের সন্ধ্যাতেই কথাটা মনে পড়ে। আপনাকে পেয়ে মনে এত আনন্দ হয়! - - এখানকার লোকজন দেখচেন তো? সব দোকানদার, লেখাপড়ার কোন চর্চ্চা নেই, ছেলেপিলেকে লেখাপড়া শেখায় এই জন্যে যে কোনো রকমে ধারপাত আর শুভঙ্কবাটা শেষ করতে পারলেই দাঁড়ি ধরবে। কারুর সঙ্গে কথা ব’লে সুখ পাইনে, ঝালমসলার দরের কথা কাঁহাতক আলোচনা করি বলুন। ভদ্রঘরের ছেলে, নাহয় এসে পড়েছি পেটের দাযে এই পাণ্ডববর্জ্জিত দেশে, কিন্তু তা বলে মনটা তো-কলেজের দু-চার ক্লাস চোখে দেখেছিলামও তো-পড়াশুনো না-হয় নাই করেচি দেখলাম অবিনাশবাবু কলেজের দিনগুলোর কথা এখনও ভুলতে পারেন নি। বেচারীর জীবনে জাকজমক নেই, আত্মপ্রতিষ্ঠার দুরাশা নেই, সাহসও বোধ করি নেই। তার যা-কিছু অভিজ্ঞতা, যা-কিছু কর্ম্মনৈপুণ্য, সবই এই অনাড়ম্বর সরল জীবনধারাকে আশ্রয় ক’রে। কলেজের দিনগুলোতেই শহরের মুখ দেখেছিলেন, আড়ম্বর বা বিলাসিতা— মনেরই বলুন বা দেহেরই বলুন-ঐ কলেজের ক’টা বছরেই তার আরম্ভ ও শেষ। সে দিনগুলো যত দূরে গিয়ে পড়চে, রঙীন স্মৃতির প্রলেপ তাদের ওপর যে তত বিচিত্র ও মোহময় হয়ে পড়বে এটা খুব স্বাভাবিক বটে। অবিনাশবাবু তামাক ধরিয়ে আমার হাতে দিয়ে আবার বলতে সুরু করলেন। —হুগলী জেলার কোনো এক গ্রামে ছিল আমার মামার বাড়ি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম-ছিল কেন? এখন নেই? সে কথা পরে বলচি। না, এখন নেই ধরে নিতে পাবেন। কেন যে নেই, তার সঙ্গে এই গল্পের একটা সম্বন্ধ আছে, গল্পটা শুনলেই বুঝবেন।