পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@心 যাত্রাবদল এবং উপস্থিত সবাই সেদিকে চেয়ে রইলেন। এবং চেয়ে থাকতে থাকতেই প্ৰকাণ্ড একখানা নতুন মোটর বটতলায় এসে দাড়িয়ে গেল । মোটর গাড়ী যে এ-গ্রামে আসে না ত’ নয়, তিন ক্রোশ দূরবর্তী ষ্টেশন থেকে মাঝে মাঝে গ্রামের কোনো নতুন জামাই সখা করে ট্যাক্সি ভাড়া করে এসেচে, শক্ত অসুখে পড়লে কেউ মহকুমা থেকে ডাক্তার অনেকবার এসেচে। নিজের মোটরে --কিন্তু এ-ধবণের বড় ও সুন্দর মোটর গাড়ী উপস্থিত ব্যক্তিগণের কেউ দেখেনি। লম্বা ধরণের প্রকাণ্ড গাড়ী, পালিশ-করা নিকেলের পাতের বনেট, দোরের হাতলল্যাম্প-সবই ঝকঝকে ; তবে গাড়ীর পেছনে ও মাড়-গার্ডে রাঙা ধুলো জমেচেযেন অনেক দূর থেকে আসচে। একজন ত্রিশ বত্ৰিশ বছরের যুবক গাড়ী চালাচ্ছিল-দোহারা গড়ন, গায়ে সাদা সিস্কের পাঞ্জাবী, মাথায় একমাথা ধূলো। সে নেমে বটতলার দিকে এগিয়ে এল-এবং অল্পক্ষণ উপস্থিত সবারই মুখের দিকে উৎসুক চোখে চেয়ে কি যেন চেনবার চেষ্টা করলে। তারপর হঠাৎ পঞ্চর মুখের ওপর দৃষ্টিনিবদ্ধ করে বল্পে : এই যে কাক ! আমায় চিনতে পারচেন না। হারাণ রায়ের দিকে চেয়েও বল্পে : কাক, আমায় মনে নেই। আপনার ? আমি ননী, আমার পিতার নাম ছিল রাজেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আপনাদের পাড়াতেইহারাণ রায় বিস্ময়ে কেমন হয়ে গিয়েছিলেন। পাথুও তাই। দু’জনেই সমস্বরে, কিন্তু খুব ধীরে ধীরে, যেন অনেকটা আপন মনেই বলে উঠলেন : রাজেনদা’র ছেলে সেই ননী ! এর বেশী কথা তাদের মুখ দিয়ে বার হােল না। ইতিমধ্যে ননী উপস্থিত সকলেরই পায়ের ধূলো নিয়ে প্ৰণাম করলে। হারাণ রায় নিজের কেঁচা দিয়ে ঝেড়ে বাধানো বেদীর এক অংশে তাকে হাত ধরে বসালেন। নানা সাগ্ৰহ প্রশ্নোত্তরের আদান-প্ৰদান চলতে লাগল।