পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8 ढ আগ্রহে খোকাকে বুকে আঁকড়ে আদর করচে, কত আশা, কত মধুর স্বপ্ন হয়তো -কিন্তু এখানেও আমার সন্দেহ এল। স্বপ্ন দেখবার মত বুদ্ধিও বৌটির আছে কি ? কল্পনা আছে ? নিজেকে এমন অবস্থায় ভাবতে পারে যা বৰ্ত্তমানে নেই কিন্তু ভবিষ্যতে হতে পারে বলে ওর বিশ্বাস ? মনের গোপন সাধ-আশাকে মনে: রূপ দিতে পারে ? নিজের সংকীর্ণ, অসুন্দর বর্তমানকে আলোক-উজ্জল ভবিষ্যতের মধ্যে হারিয়ে ফেলতে পারে ? বড় রাস্তার মােড়ে বইএর দােকানগুলো দেখে বেড়ালুম। রাশি রাশি পুরোনাে বই, ম্যাগাজিন। অধিকাংশই বাজে। অলস, অপরিণত মনের তৈরী জিনিষ । চটকদার মলাট-ওয়ালা অসার বিলিতি নভেল, সিনেমার ম্যাগাজিন ইত্যাদি । অন্যদিন এখানে বেছে বেছে দেখি, যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়। আজ আর বাছবার মত ধৈৰ্য্য ছিল না। মনের আকাশের চেহারা আজ ঘসা পয়সার মত, নীলিমার সৌন্দৰ্য্য তো নেই-ই, মেঘভরা বাদল-দিনের রূপও নেই-নিতান্তই ঘসা পয়সার মত তার চেহারা । সিনেমা দেখতে যাবো ? আউট্রাম ঘাটে বেড়াতে যাবো ? কোথাও ব’সে খুব গরম চা খাবো ? লেকের দিকে যাবো ?-- ধৰ্ম্মতলার গির্জার সামনে একজায়গায় লোকের ভিড় জমেছে। একটা সাহেবী পোষাক-পরা লোক ফুটপাথে অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছে, ধড়টা ও মাথাটা পরস্পরের সঙ্গে এমন অস্বাভাবিক কোণের সৃষ্টি করেচে, যে মনে হচ্ছে লোকটা মরে গিয়েছে। দুজন সাৰ্জেণ্ট এল। লোকে বলে, সামনের বাড়ীর নীচের তলায় ওই বাথরুমের মধ্যে পড়েছিল। এই অবস্থায় বাড়ীর দারোয়ান ধরাধরি করে ফুটপাথে এনে শুইয়ে দিয়েচে-লোকটা কে, তারা চেনে না । লোকটা মরে নি, মদে বেহুস হয়ে আছে। সার্জেণ্ট দুজন ধরাধরি করে তার সংজ্ঞাহীন নিঃসাড় দেহটা একটা ট্যাক্সিতে তুলে নিয়ে কোথায় গেল।