পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 যাত্রাবদল আমার ভারী কৌতুহল হ’ল, সাগ্রহে বললুম, ভঙুলমামা কোথায় থাকে। দিদিম ? ভঙুলমামা কে ?-- -ভঙুল রেলে চাকরি করে, লালমণিরহাটে না কোথায় । আমাদের গায়েই ছেলেবেলায় থাকত, বাড়িঘর তো ছিল না। ও-পাড়ার মুখুয্যে-বাড়ির ভাগ্নে, চাকরিবাকরি করচে, ছেলেপুলে হয়েচে, একটা আস্তানা তো চাই ? তাই টাকা পাঠিয়ে দ্যায়, মুখুয্যেরা মিস্ত্রী লাগিয়ে ঘরদোর সুরু ক’রে দিয়েচে, নিজে ছুটিতে এসে মাঝে মাঝে দেখাশুনো করে--- আমি ছাড়বার পাত্র নই, বললুম—তবে বাড়ি গাথা হচ্চে না কেন ? মুখুয্যেরা তো দেখলেই পারে ? তা নয়, সব সময় তো টাকা পাঠাতে পারে না ? যখন পাঠায়, তখন মিস্ত্রী লাগানো হয় । কি জানি কেন সেই থেকে এই ভঙুলমামা ও তাঁর আধ-গাথা বাড়িটা আমার মনে একটা অদ্ভুত স্থান অধিকার ক’রে রইল। রূপকথার রাজপুত্রের মতই এই ভঙুলমামা হয়ে রইলেন অবাস্তব, স্পর্শের অতীত, দর্শনের অতীত, এক মানসরাজ্যের অধিবাসী, তার চাকরীর স্থান লালমণির হাট, মায় তার ছেলেমেয়ে সুদ্ধ । তঁার টাকা পাঠাবার ক্ষমতা বা অক্ষমতাও যেন কোথায় আমার ব্যক্তিগত সহানুভূতির বিষয়ীভূত হয়ে দাড়াল, অথচ কেন এসব হ’ল তার কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ আজও মনের মধ্যে খুজে পাই না । কতবার দিদিমাদের চিলকোঠার ছাদে শুয়ে দিদিমার মুখে রূপকথা শুনতে শুনতে অন্যমনস্ক মনে ভেবেচি-লালমণির হাট থেকে ভঙুলমামা আবার কাবে টাকা পাঠাবে বাড়ি গাথার জন্যে ? --না, এবার বোধ হয় নিজে আসবে। মুখুয্যেরা বােধ হয়। ভঙুলমামার টাকা চুরি করে, তাই ওদের হাতে আর টাকা দেবে না। বেঙ্গমা-বেঙ্গমীর গল্পের ফাকে দিদিমাকে কখনো বা জিগ্যেস করি।--