পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈদ্যনাথ b's বাহির হইবার অনেক দিন পরে সে একবার রাণাঘাটে আমার বাসায় আসিল । সবারই মুখে শুনিতে পাইলাম বন্দিনাথ ভালো হইয়া গিয়াছে, কি করিয়া তাহারা এ কথা জানিল, আমি তাহা বলিতে পারি না। কিন্তু হঠাৎ দেখি বন্দিনাথকে বাড়ীর সবাই খুব যত্ন আদর করিতেছে। দিন দুই তিন বাসায় থাকিল, একদিন সকালে বন্দিনাথ চা খাইতে খাইতে আমারই সঙ্গে বসিয়া গল্প করিতেছে, বৌদিদি। আসিয়া বলিলেন,-বোদে, এই বাটি রইলো আর ঠাকুরপোর কাছ থেকে দশটা পয়সা নিয়ে ওই মোড়ের দোকান থেকে সর্ষের তেল নিয়ে আসিস তো ! বন্দিনাথকে পয়সা বাহির করিয়া দিলাম। চা খাওয়ার পরে। বদিনাথ কাসার বাটিটা হাতে করিয়া পযসা টাকে গুজিয়া বাহির হইয়া গেল । সকাল সাড়ে সাতটার বেশী নয় । বন্দিনাথের সঙ্গে পুনরায় দেখা বছরখানেক পরে, হঠাৎ একদিন কলিকাতায়, সীতারাম ঘোষের স্ত্রীটের মধ্যে একটা গলির মোড়ে । জীৰ্ণ মলিন, ছন্নছাড়া মূৰ্ত্তি—খালি পা, বড় বড় কাঁকড়া রুক্ষ্ম চুল, যেমন ময়লা কাপড় পরণে, ততোধিক ময়লা জামা গায়ে । প্ৰথম কথাই আমার মুখ দিয়া কি জানি বাহির হইয়া গেল, হঁ্যারে, বোদে, বাটিটা কি কারলি রে ?-- এই এক বৎসর যেন ওই কথাটা জানিবার জন্যই হঁা করিয়াছিলাম। বদিনাথ বিপন্নমুখে কি একটা জবাব দিবার দু’একবার চেষ্টা করিতে গিয়া যেন বিষম খাইল এবং হঠাৎ সুড়ৎ করিয়া পাশের গলির মধ্যে ঢুকিয়া পড়িয়া দ্রুতপদে অদৃশ্য হইয়া গেল ।