পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভানপিটে যে সময়ে আমাদের গল্পের সুরু, কাশীতে তখন উৎকৃষ্ট লাচ্চাদার রাবাড়ি পাচ আনা সের বিক্রয় হইত, ল্যাংড়া আমি টাকায় এক পণ, মহিষের দুধ টাকায় পাকি বারো সেরা । বাংলা ১২৮৭-৮৮ সালের কথা । কাশীতে তখন স্কুল-কলেজ বেশী ছিল না, সহরের বসতি আরও ঘিঞ্জি ছিল, তেলের আলো জ্বলিত রাস্তায়, অত্যন্ত অপরিষ্কার ছিল সহরের অবস্থা, গাড়ীঘোড়া ছিল কম। বুড়য়া মঙ্গলের মেলার সময় গঙ্গার ধারে ধনীদের দু’চারখানা নতুন ধরণের ভিক্টোরিয়া কি ফিটন দেখা যাইত। এক্কা ও ম্পিং-বিহীন টাঙা ছিল প্ৰধান সম্বল, সহরের বাহিরে উটের গাড়ী চলিত । গণেশ-মহল্লাতে তখন রামজীবন চক্ৰবৰ্ত্তীর খুব নাম ও পসার-প্রতিপত্তি । কমিসারিয়েট বিভাগে বড় চাকুরিতে তিনি বেশ দু’পয়সা রোজগার করিয়াছিলেন, তবে হাতে রাখিতে পারিতেন না । সেকালের রীতি অনুযায়ী তার কাশীর বাড়ীটা ছিল একটা হোটেলখানা । চাকুরি-প্ৰয়াসী বা অক্ষম ও নিরাশ্রয় আত্মীয়স্বজন ও স্ব-গ্রামের লোকের ভিড়ে বাড়িতে পা দিবার স্থান থাকিত না । রামজীবনবাবুর চার ছেলে, বড় তিনটি ভয়ানক ডানপিঠে, স্কুলে যাবার নাম করিয়া পথে মারামারি করিত, ঘুড়ি উড়াইত, স্কুলের সময়টি কাটাইয়া ছুটির সময়ে বাড়ি ফিরিত । ইহাদের উপযুক্ত সঙ্গীও জুটিয়াছিল। দশ-বারোজন পাড়ার ছেলে, সকলেই সমান ডানপিটে, সমানই তাদের বিদ্যাৰ্জন-স্পৃহা। স্কুলের সময় দল বঁাধিয়া বাড়ি হইতে বাহির হইয়া হয়তো সহরের বাহিরে পথের ধারের এক বড় পেয়ারা বাগানে ঢুকিয়া ফল ছিড়িয়া খাইয়া ফেলিয়া ছড়াইয়া নষ্ট করিয়া বেলা