পাতা:যাত্রাবদল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 যাত্রাবদল যাদুরামও বিছানা ছাড়িয়া আর উঠবে না। যাদুরামও নিজে সেটা খুব ভাল করিয়াই বুঝিয়াছিল-ক্ষীণ কণ্ঠে বলিল, মুখুয্যে মশায়, ওষুধ আর কি দেবেন, পায়ের ধূলো দিন। একটা কথা বলি, নাতিটার উপায় করতে পারলাম না, দুই দুইটা ছেলে মারা গেল-ওই টুকু বংশের মধ্যে শিবরাত্রির সলতে, ওকে আপনার চরণে দিয়ে গেলাম। কম্পাউণ্ডারীতে ভৰ্ত্তি ক’রে নেবেন আপনার ডাক্তারখানায় --বছর তিনেক দেখে শুনে শিখলে তবুও অন্য চাষা গাঁয়ে গিয়ে হাতুড়েগিরি করেও দুটো খেতে পারবে । সতীশের চোখ জলে ভরিয়া আসিল ভগ্নহৃদয় বৃদ্ধ চিকিৎসকের অন্তিম শয্যাপার্শ্বে বসিয়া। সে আশ্বাস দিল, এ বিষয়ে তাহার দ্বারা যতদূর সাধ্য সে করিতে ক্ৰটী করিবে না । যাদুরাম এমন পয়সা রাখিয়া যায় নাই, যাহাতে তাহার শ্রাদ্ধের খরচ নির্বাহ হইতে পারে- সতীশ নিজে শ্ৰাদ্ধ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয়ভার বহন কৰি ল। নাতিকে নিজের ডাক্তারখানায় আনিয়া কাজ শিখাইতে লাগিল, খুচরা কিছু দেন ছিল বৃদ্ধের, তাহাও একরূপ সাময়িক মীমাংসা করিয়া দিল । এই সময় সতীশের নিজের সময়েরও পরিবর্তন দেখা দিল । ছোট ছেলের কলেজের খরচ, বড় ছেলের ডাক্তারি পড়ার খরচ-এদিকে কি জানি কেন রোগীর সংখ্যা কমিতেছে। স্থানটা কি হঠাৎ স্বাস্থ্যনিবাস হইয়া উঠিল না-কি ? সঞ্চিত অর্থে ক্রমশঃ হাত পড়িতে লাগিল- এবং সাধারণতঃ যাহা ঘাঁটিয়া থাকে, একবার সঞ্চিত অর্থে হাত যখন পড়িল, সে হাতকে আর গুটানো গেল না-বৎসরের পর বৎসর ক্রমশঃ খরচ বাড়িয়াই চলিয়াছে- আয় তেমন নাই, হাতের টাকা নিঃশেষ হইতে এ অবস্থায় কত দিন লাগে ? সতীশ অমানুষিক পরিশ্রম করিতে লাগিল । আর দুটো বছর ; বিনয় মানুষ হইলে আর কিসের ভাবনা ? এ অঞ্চলে এম বি পাশ করা ডাক্তার ক’টা আছে ? কখনো যে সব গ্রামে দশ টাকা ভিজিটের কমে সতীশ যায় নাই-এখন চার টাকা