পাতা:যুগান্তর - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

እ ( 8 যুগান্তর পরিবারস্থ সকলেই এই পরিবর্তন লক্ষ্য করিলেন। গৃহিণী সৰ্ব্বদা বলিতে লাগিলেন, “বিজয়ীর কি হয়েছে কে জানে ; খায় না দায় না, ভাল করে হেসে কথা কয় না ; শরীরটা একেবারে পাত করবার জন্যে যেন লেগেছে।” তর্কভূষণ মহাশয় ভগিনীর কঠোর তপস্যা দর্শনে একটু চিন্তিত হইলেন ; কিন্তু মনে মনে শ্রদ্ধা করিতে লাগিলেন । এইরূপে এক বৎসর কাটিয়া গেল। দ্বিতীয় বৎসর, গ্রীষ্মকালে গিরিশচন্দ্ৰ আবার কতকগুলি ইংরাজী বই আনিয়া ঈশ্বর ও পরকাল বিষয়ে অনেক কথা পড়িয়া শুনাইলেন। বিজয়া তখনও যেন দাড়াইবার ভূমি পাইলেন না। তাহার অনেক কথা যেন ঢেকিবা কচকচি বলিয়া বোধ হইল ! তাহার হৃদয়ের শূন্যতা গেল না। তঁহার ব্যাকুলতা এবং তপস্যার কঠোরতা দিন দিন বৰ্দ্ধিত হইতে লাগিল। অবশেষে গ্রীষ্মাবকাশের পরেই গোবিন্দ তঁাতার জন্য, শ্ৰীমদ্ভাগবতের কয়েক স্কন্ধ, গীতা ও মহানিৰ্বাণ তন্ত্র এই তিন খানি গ্ৰন্থ সংগ্ৰহ করিয়া পাঠাইল । ক্ষুধিত ব্যান্ত্র যেমন আমিষখণ্ডের উপরে পড়ে, বিজয়া উক্ত গ্ৰন্থত্রয়কে সেই ভাবে গ্ৰহণ করিলেন। গভীর রাত্রে অভিনিবেশপূর্বক অনুবাদগুলি পাঠ করিতে লাগিলেন । চিন্তা ও প্রার্থনা সহকারে পাঠ করিতে করিতে যেন ঘনান্ধকারের মধ্যে আলোকের রেখা দেখিতে পাইলেন । তিনটী বিশ্বাস তাহার হৃদয়ে জাগিয়া উঠিল । প্ৰথমতঃ, ইহা তঁহার প্রতীতি হইল যে, তাহার পিতা ও জ্যেষ্ঠ সহোদর “তারা” নামে র্যাহাকে লক্ষ্য করেন, ভাগবতে র্যাহাকে “কৃষ্ণ” শব্দে অভিহিত করেন, এবং তঁহার পরলোকগীত পতি র্যাহাকে “পরব্রহ্ম।” রূপে অৰ্চনা করিতেন, তাহা একই বস্তু। এই পরম বস্তু বা পরম পুরুষই সার, জগৎ তাহার আবরণ মাত্র ; এবং সমুদায় প্ৰকৃতি ও মানব-জীবন তঁহারই লীলা-ক্ষেত্ৰ ।