পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

বেলা কোনাে সময়ে কেউ যে ক্ষণকালের জন্যেও ছিল তার চিহ্নও পাওয়া যায় না। এক মুহূর্তে তার অধৈর্য যেন অসহ্য হয়ে উঠল। যদিও সে ভাশুর, এবং কোনােদিন মেজোবউয়ের সঙ্গে একটা কথাও কয় নি, তবু তাকে ডেকে কুমু সম্বন্ধে যা-হয় কিছু একটা বলবার জন্যে মনটা ছটফট করতে লাগল। একবার বের হয়েও এল কিন্তু মােতির মা তখন নিচে চলে গিয়েছে।

 নববধূ কর্তৃক পরিত্যক্ত শােবার ঘরে অকারণে অসময়ে একলা যাপন করবার অসম্মান থেকে রক্ষা পাবার জন্যে বাইরের দিকে বেগে গেল হন হন করে। মস্ত একটা জরুরি কাজ করবার ভান করে ডেস্কের উপরে ঝুঁকে পড়ল। সামনে ছিল একখানা খাতা। সাধারণত সেটা সে প্রায় দেখে না, দেখে তার আপিসের হেডবাবু। আজ লােকচক্ষুকে প্রতারণা করবার উদ্দেশ্যে সেটা খুলে বসল। এই খাতায় তার বাড়ির সমস্ত চিঠি ও টেলিগ্রাম রওনা করবার দিন-ক্ষণ টোকা থাকে। খাতা খুলে প্রথমেই দেখতে পেলে আজকের তারিখের টেলিগ্রামের ফর্দর মধ্যে বিপ্রদানের নাম ও ঠিকানা। প্রেরক হচ্ছেন স্বয়ং কর্ত্রীঠাকুরানী।

 “ডাকো দারােয়ানকে।”

 দারােয়ান এল।

 “এ টেলিগ্রাম কে দিয়েছিল পাঠাতে?”

 “মেজোবাবু।”

 “ডাকো মেজোবাবুকে।”

 মেজোবাবু পাংশুবর্ণ মুখে এসে হাজির।

 “আমার হুকুম না নিয়ে টেলিগ্রাম পাঠাতে কে বললে?” যে বলেছিল শাসনকর্তার সামনে তার নাম মুখে আনা তো সহজ ব্যাপার

১১২