মধুসূদন জিজ্ঞাসা করলে, এত রাত্রে তুমি যে এখানে?”
নবীনের মাথায় বুদ্ধি জোগাল, সে বললে, “শুতে যাবার আগেই তাে আমি ঘড়িতে দম দিয়ে যাই, আর তারিখের কার্ড ঠিক করে দিই।
“আচ্ছা, ঘরে এসে শােনো।”
নবীন ত্রস্ত হয়ে কাঠগড়ার আসামির মতাে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
মধুসূদন বললে, “বড়ােবউয়ের কানে মন্ত্র ফোসলাবার কেউ থাকে এটা আমি পছন্দ করি নে। আমার ঘরের বউ আমার ইচ্ছেমত চলবে, আর-কারও পরামর্শ মতো চলবে না,— এইটে হল নিয়ম।”
নবীন গম্ভীরভাবে বললে, “সে তো ঠিক কথা।”
“তাই আমি বলছি, মেজোবউকে দেশে পাঠিয়ে দিতে হবে।”
নবীন খুব যেন নিশ্চিন্ত হল এমনি ভাবে বললে, “ভালাে হল দাদা, আমি আরও ভাবছিলুম পাছে তােমার মত না হয়।”
মধুসূদন বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “তার মানে?”
নবীন বললে, “ক-দিন ধরে দেশে যাবার জন্যে মেজোবউ অস্থির করে তুলেছে, জিনিসপত্র সব গােছানােই আছে, একটা ভালাে দিন দেখলেই বেরিয়ে পড়বে।”
বলা বাহুল্য, কথাটা সম্পূর্ণ বানানো। তার বাড়িতে মধুসূদন যাকে ইচ্ছে বিদায় করে দেবে, তাই বলে কেউ নিজের ইচ্ছায় বিদায় হতে চাইবে এটা সম্পূর্ণ বেদস্তুর। বিরক্তির স্বরে বললে, “কেন, যাবার জন্যে তার এত তাড়া কিসের?”
নবীন বললে, “বাড়ির গিন্নি এ-বাড়িতে এসেছেন, এখন এ-বাড়ির সমস্ত ভার তো তাঁকেই নিতে হবে। মেজোবউ বললে, আমি মাঝে থাকলে কী জানি কখন কী কথা ওঠে।”
মধুসূদন বললে, “এ-সব কথার বিচারভার কি তারই উপরে?”