যেন আছে অপরাধীর আত্মগ্লানি। কুমু বিস্মিত হয়ে গেল, তার মনে হল এ দৈবেরই লীলা। কেননা, সে যে দিনের বেলা বারবার নিজেকে বলেছে, “তুই রাগ করিস নে।” সেই কথাটাই আজ অর্ধরাত্রে অপ্রত্যাশিতভাবে কে মধুসূদনকে দিয়ে বলিয়ে নিলে।
মধুসুদন আবার তাকে বললে, “তুমি কি এখনও আমার উপর রাগ করে আছ?”
কুমু বললে, “না, আমার রাগ নেই, একটুও না।”
মধুসূদন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়ে গেল। ও যেন মনে-মনে কথা কইছে; অনুদ্দিষ্ট কারও সঙ্গে যেন ওর কথা।
মধুসূদন বললে, “তা হলে এ-ঘর থেকে এস তােমার আপন ঘরে।”
কুমু আজ রাত্রে প্রস্তুত ছিল না। ঘুমের থেকে জেগে উঠেই হঠাৎ মনকে বেঁধে তোলা কঠিন। কাল সকালে স্নান করে দেবতার কাছে তার প্রতিদিনের প্রার্থনা-মন্ত্র পড়ে তবে কাল থেকে সংসারে তার সাধনা আরম্ভ হবে এই সংকল্প সে করেছিল। তখন ওর মনে হল, ঠাকুর আমাকে সময় দিলেন না, আজ এই গভীর রাত্রেই ডাক দিলেন। তাঁকে কেমন করে বলব যে, “না।” মনের ভিতরে যে একটা প্রকাণ্ড অনিচ্ছা হচ্ছিল তাকে অপরাধ বলে কুমু ভয় পেলে। এই অনিচ্ছার বাধা তাকে টেনে রাখছিল বলেই কুমু জোরের সঙ্গে উঠে দাঁড়ালে, বললে, “চলো।”
উপরে উঠে তার শােবার ঘরের সামনে একটু থমকে দাঁড়িয়ে সে বললে, “আমি এখনই আসছি, দেরি করব না।”
বলে ছাদের কোণে গিয়ে বসে পড়ল। কৃষ্ণপক্ষের খণ্ড চাঁদ তখন মধ্য-আকাশে।