পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 মোতির মা চুপ করে রইল।

 কুমু তার হাত চেপে ধরে উৎকণ্ঠিত হয়ে বলে, “কোথায় দাদার চিঠি, আমাকে এনে দাও না।”

 মোতির মা চুপি চুপি বলল, “সে-চিঠি আনতে পারব না, সে বড়ঠাকুরের বাইরের ঘরের দেরাজে আছে।”

 “আমার চিঠি আমাকে কেন এনে দিতে পারবে না?”

 “তাঁর দেরাজ খুলেছি জানতে পারলে প্রলয় কাণ্ড হবে।”

 কুমু অস্থির হয়ে বললে, “দাদার চিঠি তাহলে আমি পড়তে পাব না?”

 “বড়ঠাকুর যখন আপিসে যাবেন তখন সে চিঠি পড়ে আবার দেরাজে রেখে দিয়ো।”

 রাগ তো ঠেকিয়ে রাখা যায় না। মনটা গরম হয়ে উঠল। বললে, “নিজের চিঠিও কি চুরি করে পড়তে হবে?”

 “কোন্‌টা নিজের কোন্‌টা নিজের নয়, সে-বিচার এ-বাড়ির কর্তা করে দেন।”

 কুমু তার পণ ভুলতে যাচ্ছিল, এমন সময় হঠাৎ মনের ভিতরটা তর্জনী তুলে বলে উঠল “রাগ কোরো না।” ক্ষণকালের জন্যে কুমু চোখ বুজলে। নিঃশব্দ বাক্যে ঠোঁট দুটো কেঁপে উঠল, “প্রিয়ঃ প্রিয়ায়ার্হসি দেব সোঢ়ুম্।”

 কুমু বললে, “আমার চিঠি কেউ যদি চুরি করেন করুন, আমি তাই বলে চুরি করে চুরির শোধ দিতে চাই নে।”

 বলেই কুমুর তখনই মনে হল কথাটা কঠিন হয়েছে। বুঝতে পারলে, ভিতরে যে-রাগ আছে নিজের অগোচরে সে আপনাকে প্রকাশ তাকে উম্মুলিত করতে হবে। তার সঙ্গে লড়াই করতে চাইলে সব সময় তো তার নাগাল পাওয়া যায় না। গুহার মধ্যে সে

১৩০