পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 মোতির মা যখন এসে বললে “চলো ভাই, খেতে যাবে” তখন সেই ছাদের কোণের একটুখানি ছায়া গেছে লুপ্ত হয়ে, কিন্তু তখন ওর মন সুরে ভরপুর, সংসারে কে ওর ’পরে কী অন্যায় করেছে সে-সমস্ত তুচ্ছ হয়ে গেছে। ওর চিঠি নিয়ে মধুসূদনের যে ক্ষুদ্রতা, যে-ক্ষুদ্রতায় ওর মনে তীব্র অবজ্ঞা উদ্যত হয়ে উঠেছিল, সে যেন এই রোদ-ভরা আকাশে একটা পতঙ্গের মতো কোথায় বিলীন হয়ে গেল, তার ক্রুদ্ধ গুঞ্জন মিলিয়ে গেল অসীম আকাশে। কিন্তু চিঠির মধ্যে দাদার যে স্নেহবাক্য আছে সেটুকু পাবার জন্যে তার মনের আগ্রহ তো যায় না।

 ওই ব্যাগ্রতাটা তার মনে লেগে রইল। খাওয়া হয়ে গেলে আর সে থাকতে পারলে না। মোতির মাকে বললে, “আমি যাই বাইরের ঘরে, চিঠি প’ড়ে আসি।”

 মোতির মা বললে, “আর একটু দেরি হোক, চাকররা সবাই যখন ছুটি নিয়ে খেতে যাবে তখন যেয়ো।”

 কুমু বললে, “না না, সে বড় চুরি করে যাওয়ার মতো হবে। আমি সকলের সামনে দিয়ে যেতে চাই, তাতে যে যা মনে করে করুক।”

 মোতির মা বললে, “তাহলে চলো আমিও সঙ্গে যাই।”

 কুমু বলে উঠল, “না, সে কিছুতেই হবে না। তুমি কেবল বলে দাও কোন্ দিক দিয়ে যেতে হবে।”

 মোতির মা অন্তঃপুরের ঝরকা-দেওয়া বারান্দা দিয়ে ঘরটা দেখিয়ে দিলে। কুমু বেরিয়ে এল। ভৃত্যেরা সচকিত হয়ে উঠে তাকে প্রণাম করলে। কুমু ঘরে ঢুকে ডেস্কের দেরাজ খুলে দেখলে তার চিঠি। তুলে নিয়ে দেখলে লেফাফা খোলা। বুকের ভিতরটা ফুলে উঠতে লাগল, একেবারে অসহ্য হয়ে উঠল। যে-বাড়িতে কুমু মানুষ হয়েছে সেখানে এ-রকম অবমাননা কোনোমতেই কল্পনা পর্যন্ত করা যেত না। নিজের

১৩২