পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 “আমরা তাঁকে খাওয়াব কী করে?”

 “তোমার স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে। যা, যা বলছি। বেরো বলছি ঘর থেকে।”

 নবীন বেরিয়ে গেল। মধুসূদন ওডিকলোন-ভিজনো পটি কপালে জড়িয়ে আবার একবার আপিসে যাবার সংকল্প মনে দৃঢ় করতে লাগল।

 নবীনের কাছে মোতির মা সব কথা শুনে দৌড়ে গেল কুমুর শোবার ঘরে। দেখলে তখনও সে কাপড়চোপড় পাট করছে তোলবার জন্যে। বললে, “এ কী করছ, বউরানী।”

 “তোমাদের সঙ্গে যাব।”

 “তোমাকে নিয়ে যাবার সাধ্য কী আমার।”

 “কেন?”

 “বড়ঠাকুর তাহলে আমাদের মুখ দেখবেন না।”

 “তাহলে আমার ও দেখবেন না।”

 “তা সে যেন হল, আমরা যে বড়ো গরিব।”

 “আমিও কম গরিব না, আমারও চলে যাবে।”

 “লোকে যে বড়ঠাকুরকে নিয়ে হাসবে।”

 “তা বলে আমার জন্যে তোমরা শাস্তি পাবে, এ আমি সইব না।”

 “কিন্তু দিদি, তোমার জন্যে তো শাস্তি নয়, এ আমাদের নিজের পাপের জন্যেই।”

 “কিসের পাপ তোমাদের?”

 “আমরাই তো খবর দিয়েছি তোমাকে।”

 “আমি যদি খবর জানতে চাই তাহলে খবর দেওয়াটা অপরাধ?”

 “কর্তাকে না জানিয়ে দেওয়াটা অপরাধ।”

১৪২