পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

বাড়িতে যে চুপি চুপি সঞ্চরণ করবে তার জো নেই। চারি দিকেই সতর্ক দৃষ্টির ব্যূহ। রাজাবাহাদুর এই রাত্রে বিছানা ছেড়ে খালি পায়ে অন্ধকারে বাইরের বারান্দায় ভূতের মতো বেরিয়েছে এ যে একেবারে অভূতপূর্ব। প্রথমে দূর থেকে যখন চিনতে পারে নি, চৌকিদার বলে উঠেছিল, “কোন্ হ্যায়?” কাছে এসে জিভ কেটে মস্ত প্রণাম করলে; বললে, “রাজাবাহাদুর, কিছু হুকুম আছে?”

 মধুসুদন বললে, “দেখতে এলুম ঠিকমতো চলছে কি না।” কথাটা মধুসূদনের পক্ষে অসংগত নয়।

 তার পরে মধুসূদন বৈঠকখানাঘরে গিয়ে দেখে, যা ভেবেছিল তাই, নবীন বসবার ঘরে গদির উপর তাকিয়া আঁকড়ে নিদ্রা দিচ্ছে। মধুসূদন ঘরে একটা গ্যাসের আলো জ্বেলে দিলে, তাতেও নবীনের ঘুম ভাঙল না। তাকে ঠেলা দিতেই ধড়ফড় করে জেগে সে উঠে বসল। মধুসূদন তার কোনোরকম কৈফিয়ত তলব না করেই বললে, “এখনই যা, বড়োবউকে বল্ গে আমি তাকে শোবার ঘরে ডেকে পাঠিয়েছি।” বলে তখনই সে অন্তঃপুরে চলে গেল।

 কিছুক্ষণ পরেই কুমু শোবার ঘরে এসে প্রবেশ করলে। মধুসূদন তার মুখের দিকে চাইলে। সাদাসিধে একখানি লালপেড়ে শাড়ি পরা। শাড়ির প্রান্তটি মাথার উপরে টানা। এই নির্জন ঘরের অল্প আলোয় এ কী অপরূপ আবির্ভাব। কুমু ঘরের প্রান্তের সোফাটির উপরে বসল।

 মধুসূদন তখনই এসে বসল মেজের উপরে তার পায়ের কাছে। কুমু সংকুচিত হয়ে তাড়াতাড়ি ওঠবার চেষ্টা করবামাত্র মধুসূদন হাতে ধরে তাকে টেনে বসালে; বললে, “উঠো না, শোনো আমার কথা। আমাকে মাপ করো, আমি দোষ করেছি।”

১৪৭