পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

যেন নিজের মধ্যে নিজের অন্তরাল খুঁজছে। মধুসূদন মাঝে মাঝে দেওয়ালের ঘড়িটার দিকে তাকায় আর হিসেব করতে থাকে, কাপড় ছাড়বার জন্যে কতটা সময় দরকার। ইতিমধ্যে আয়নাতে নিজের মুখটা দেখলে মাথার তেলোর যে-জায়গাটাতে কড়া চুলগুলো বেমানান-রকম খাড়া হয়ে থাকে বৃথা তার উপরে কয়েকবার বুরুশের চাপ লাগালে, আর গায়ের কাপড়ে অনেকখানি দিলে ল্যাভেণ্ডার ঢেলে।

 পনেরো মিনিট গেল; বেশ-বদলের পক্ষে সে-সময়টা যথেষ্ট। মধুসূদন চুপি চুপি একবার নাবার ঘরের দরজার কাছে কান দিয়ে দাঁড়াল, ভিতরে নড়াচড়ার কোনো শব্দ নেই—মনে ভাবলে কুমু হয়তো চুলটার বাহার করছে, খোঁপাটা নিয়ে ব্যস্ত। মেয়েরা সাজ করতে ভালোবাসে মধুসূদনেরও এ-আন্দাজটা ছিল, অতএব সবুর করতেই হবে। আধঘণ্টা হল—মধুসূদন আর-একবার দরজার উপর কান লাগালে, এখনও কোনো শব্দ নেই। ফিরে এসে কেদারায় বসে পড়ে খাটের সামনের দেয়ালে বিলিতি যে-ছবিটা ঝোলানো ছিল তার দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ এক সময়ে ধড়ফড় করে উঠে রুদ্ধ দ্বারের কাছে দাঁড়িয়ে ডাক দিলে, “বড়োবউ, এখনও হয় নি?”

 একটু পরেই আস্তে আস্তে দরজা খুলে গেল। কুমুদিনী বেরিয়ে এল, যেন সে স্বপ্নে-পাওয়া। যে-কাপড় পরা ছিল তাই আছে; এ তো রাত্রে শোবার সাজ নয়। গায়ে একখানা প্রায় পুরো হাত-ওয়ালা ব্রাউন রঙের সার্জের জামা, একটা লালপেড়ে বাদামি রঙের আলোয়ানের আঁচল মাথার উপর টেনে-দেওয়া। দরজার একটা পাল্লায় বাঁ হাত রেখে যেন কী দ্বিধার ভাবে দাঁড়িয়ে রইল—একখানি অপরূপ ছবি। নিটোল গৌরবর্ণ হাতে মকরমুখো প্লেন সোনার বালা—সেকেলে ছাঁদের— বোধ হয় এককালে তার মায়ের ছিল। এই মোটা ভারী বালা

১৫০