তো পাকে না। সময় পেল না বলেই আজ ওদের সম্বন্ধ কুমুকে এমন করে মারছে, এত অপমান করছে। কোথায় পালাবে। মোতির মাকে ওই যে বললে, গোপালকে ডেকে দাও, সে এই পালাবার পথ খোঁজা—বৃদ্ধ অশুচিতার কাছ থেকে নবীন নির্মলতার মধ্যে, দূষিত নিশ্বাসবাষ্প থেকে ফুলের বাগানের হাওয়ায়।
একটা পাতলা তুলো-ভরা ছিটের জামা গায়ে দিয়ে হাবলু সিঁড়ির দরজার কাছে এসে ভয়ে ভয়ে দাঁড়াল। ওর মায়ের মতোই বড়ো বড়ো কালো চোখ, তেমনিই জল-ভরা মেঘের মতো সরস শামলা রঙ, গাল দুটো ফুলো ফুলো, প্রায় ন্যাড়া করে চুল ছাঁটা।
কুমু উঠে গিয়ে সংকুচিত হাবলুকে টেনে এনে বুকে চেপে ধরলে; বললে, “দুষ্ট ছেলে, এ দুদিন আস নি কেন?”
হাবলু কুমুর গলা জড়িয়ে ধরে কানে-কানে বললে, “জেঠাইমা, তোমার জন্যে কী এনেছি বলো দেখি?”
কুমু তার গালে চুমু খেয়ে বললে, “মানিক এনেছ গোপাল।”
“আমার পকেটে আছে।”
“আচ্ছা, তবে বের করো।”
“তুমি বলতে পারলে না।”
“আমার বুদ্ধি নেই, যা চোখে দেখি তাও বুঝতে পারি নে, যা দেখি তা আরও ভুল বুঝি।”
তখন হাবলু খুব আস্তে আস্তে পকেট থেকে ব্রাউন কাগজের একটা পুঁটুলি বের করে কুমুর কোলের উপর রেখে দৌড়ে পালাবার উপক্রম করলে।
“না, তোমাকে পালাতে দেব না।”
পুঁটুলিটা হাত দিয়ে চাপা দিয়ে ব্যস্ত হয়ে হাবলু বললে, “তাহলে এখন দেখো না।”